আবুল হায়াত অভিনয় জগতের এক জীবন্ত নক্ষত্র! একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা, লেখক, ঔপন্যাসিক, নির্মাতা, প্রকৌশলী আদ্যোপান্ত একজন শিল্পের মানুষ আবুল হায়াত। শিল্পের সঙ্গে এই মানুষটির সখ্যতা ৫৫ বছরের অধিক সময় ধরে এবং দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নেই কোনো বিতর্কের দাগ, নেই কোনো ব্যর্থতা। প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে প্রশংসা আর দর্শকদের ভালোবাসা। ৬৯'-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকে আজ অব্দি নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন আবুল হায়াত। তাঁর অভিনীত নাটকের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। ছয় দশকের শিল্পীজীবনে বরেণ্য শিল্পী আবুল হায়াত দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কাজ। অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখি ও নাটক নির্মাণ সবই চলেছে একসঙ্গে। বুয়েট থেকে কৃতিত্বের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পাশ করেও শিল্প-সংস্কৃতি থেকে তাকে বিচ্যুত করা যায়নি। বরং অভিনয়ের জন্য ছেড়েছেন লোভনীয় সব চাকরি। শিল্পীর জীবনের এই শৈল্পিক দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার গল্পগুলো এবার উঠে এসেছে তাঁর আত্মজীবনী 'রবি পথ'-এ। তিনি এ আত্মজীবনীতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এই আত্মজীবনীটি এক আনন্দ-যাত্রার গল্প, যা পরবর্তী প্রজন্মকে শিল্পকে ধারণ করতে, শিল্পের সাথে পথ চলতে সাহস জোগাবে। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি একই সাথে সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। খুব সহজ সরল তাঁর জীবন দর্শন, এক কথায় বলা যেতে পারে 'living in art for art's sake'। তিনি দর্শকদের ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই ভালোবাসা বুকে নিয়ে অভিনয় করে যেতে চান।
১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তিনি হলেন একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশী নাট্যাভিনেতা। আবুল হায়াতের বাবা আব্দুস সালাম ছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক। স্কুল জীবন কাটে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট ও রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মেটৃকুলেশন (বর্তমান এসএসসি) পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ১৯৬২ সালে বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটে পড়ার সময়ই শেরেবাংলা হলে থাকতেন। এরপর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৯৬৭ সালে পাস করে ১৯৬৮ সালেই ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে ইডিপাস নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো টিভি পর্দায় তার অভিনয়ের অভিষেক ঘটে। ১৯৭০ সালে আবুল হায়াতের সঙ্গে বিয়ে হয় তার মেজ বোনের ননদ “মাহফুজা খাতুন শিরিনের” সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াতের। ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা। তিনি বহুবছর ধরে টিভি নাটকে, সিনেমায় আর বিজ্ঞাপনে সফলতার সাথে অভিনয় করে আসছেন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ রচিত প্রচুর নাটকে তিনি অংশ নিয়েছেন। 'মিসির আলি' তার একটি স্মরণীয় চরিত্র। তার প্রথম নাটক ইডিপাস ১৯৬৯ সালে বের হয়েছিল। এর পর একে একে ৫০০ এরও অধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের পিতা। তিনি অনেকগুলো বাংলা চলচ্চিত্রে ও অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি মাঝে মাঝে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে থাকেন। প্রথম আলোতে তাঁর কলামের নাম 'এসো নীপবনে' । বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা - দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) বিজয়ী হন।