স্বাধীনতাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল অবশ্যই কিছু অঙ্গীকার নিয়ে, অন্যায় রক্তপাতের সম্ভাবনাকে চিরতরে নির্মূল করাও ছিল সেই অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দুঃখজনক অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের বাংলাদেশ আবার প্রত্যক্ষ করলো নতুন রক্তপাত—নব আঙ্গিকে। আর এই রক্তপাত করলো সেই আওয়ামী লীগ, যার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অত্যন্ত ব্যাপক, জাতি যার ওপর আরোপ করেছিল সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যে সব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকার ও তার নীতির বিরোধিতা করেছে, সে সব দলের ২৫ হাজার ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। এই হতভাগাদের হত্যা করা হয়েছে চরম নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার মধ্য দিয়ে, যে নৃশংসতা অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। খুন, সন্ত্রাস, নির্যাতন, হয়রানি, নারী ধর্ষণ, লুন্ঠন কোনো কিছুই বাদ রাখা হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হত্যাকাণ্ডের যে ছড়াছড়ি, যে প্রবণতা জাতিকে বঞ্চিত করেছে স্বাধীনতার সুফল থেকে, সে হত্যাকাণ্ডের সূচনা ও উৎস খুঁজে বের করা ভবিষ্যতের খাতিরেই প্রয়োজন— প্রয়োজন ইতিহাসেরও। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সার্বভৌমত্ব এসেছে দেশের। কিন্তু আজও মায়ের বুকে সন্তানের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বারেবারে খালি হচ্ছে মায়ের বুক। রক্ত আর অশ্রু ধুয়ে মুছে দিচ্ছে আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিঃশেষ কিংবা নিদেনপক্ষে হ্রাস হবার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থ অসামান্য অবদান রাখবে।
লেখক-নাট্যকার আহমেদ মুসার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ইজারকান্দি গ্রামে। মানুষের প্রতি তাঁর দরদ অপরিসীম এবং সেই সূত্রেই স্কুল-দাম্ভিক অপ-মানুষদের অবজ্ঞা করার মহার্ঘ বিলাসিতা করতে গিয়ে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। জীবনে সেই কবে, পেছনে ফেলে এসেছেন কাশবন দোলানাে দুঃখী-গ্রাম, ধুধু বালুর চর, ঘুঘু ডাকা বিষন্ন দুপুর আর রূপান্তরহীন জীবন। বস্তুত এগুলােই তার সৃষ্টিশীল প্রেরণার তালপুকুর। রাজনৈতিক-হত্যাকাণ্ড-বিরােধী কয়েকটি সাড়া জাগানাে গ্রন্থ লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কিত গবেষণাসহ আরাে কিছু সমীক্ষা-ধর্মী গ্রন্থও তার রয়েছে। কিন্তু গল্পউপন্যাস তাঁর আদি ঠিকানা। তিনি আবার ফিরে এসেছেন শেকড়ে পানি ঢালতে। তার চারটি উপন্যাস এক মলাটে প্রকাশিত হয়েছে। তার গল্পগ্রন্থ উজান চর, ভাটির চর পাঠকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তার মঞ্চ নাটক হবু চন্দ্র সমাচার সমকালের হাসির মৌলিক নাটকের অন্যতম একটি। দীর্ঘ দিন ধরে একটানা মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। তার মঞ্চ নাটক হবু চন্দ্র সমাচার সমকালের হাসির মৌলিক নাটকের অন্যতম একটি। দীর্ঘ দিন ধরে একটানা মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। তার মঞ্চ নাটক এক যে ছিল অকাল, নাদের আলীর সাহিত্য সম্মেলন, পথনাটক আহা বেশ বেশ বেশ এবং কয়েকটি টিভি ধারাবাহিক ও একক নাটক নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে তাঁর লেখা একক নাটক চান মিয়ার নেগেটিভ-পজেটিভ এক যুগ পরেও দর্শক এবং নাট্যকর্মীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল রয়েছে। তার কয়েকটি মঞ্চনাটক, পথ নাটক ও একক অভিনয় নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চনাটক সমগ্র। গাঁও গেরামের ছড়া, ছােটদের ফকির মজনু শাহ, শিশু-কিশােরদের মঞ্চ নাটক কবি রাজার দেশে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। তাঁর লেখা প্রবন্ধনিবন্ধ এবং তার গ্রহণ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আরাে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যাঙ্গনে আবার তিনি আসন করে নিতে পারবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস। ছিচল্লিশ বছরের জীবনে বহু এবং বিচিত্র ধরনের পেশায় তিনি নিয়ােজিত থাকলেও সবচেয়ে স্থিতু সাংবাদিকতায়। বর্তমানে বাংলাদেশ লােক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আহমেদ মুসা প্রথাগত শিক্ষা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে।