এই লেখাটি আমার চিন্তার মধ্যেও ছিল না। ‘আড্ডা’র ওপরে পাক্ষিক ‘অনন্যা’য় এটি সামান্য ক’টি কিস্তিতে ছাপা হয়। সে-ও সম্ভব হয়েছিল নিষ্ঠাবান নাট্যকর্মী প্রতিভাবান নির্দেশক অনুজপ্রতিম অলক বসুর ঐকান্তিক ইচ্ছায়। প্রথম দিকের বেশ ক’টি কিস্তির অনুলিখন নিয়েছিলেন অনুজ কবি শিহাব শাহরিয়ার। ‘অনন্যা’য় প্রকাশিত অংশটি শুধু ‘আড্ডা’ সংক্রান্তই ছিল। এরপরে কবি ফারুক মাহমুদের নাছোড় ইচ্ছের কাছে হার মেনে বাকিটা হয়ে উঠতে পেরেছে। অতঃপর ‘আমার দেশ’-এ ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত রচনাটিই শেষ পর্যন্ত এই বইয়ের আকার নিয়েছে। জন্ম থেকে ১৯৬২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ পর্যন্ত এই বইয়ের বিস্তার। বিশ শতকের ষাটের দশক সারা পৃথিবীতেই এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দশক। এই দশকেই ক‚টবুদ্ধিসম্পন্ন বিরলকেশ বৃদ্ধদের বিরুদ্ধে পৃখিবীজুড়ে তারুণ্যের উত্থান ঘটে। ’৬৮-র প্যারিস সম্মেলন তার প্রমাণ; দার্শনিক জ্যাঁ পোল সার্ত তরুণদের ইশতেহার নিজে ফেরি করে বিক্রি করেন। সার্ত ও তরুণদের লক্ষ্য ছিল একটাই রক্ষণশীলতার দুর্গ চুরমার করা। আমাদের দেশ এবং বাঙালির জীবনের জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দশক। কুখ্যাত হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ’৬২-র আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৬-র ছয় দফা হয়ে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই সময় সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন। আত্মজীবনীর ২য় অংশে যদি সম্ভব হয় কখনো তবে সে চেষ্টাই করবো। তৃতীয় খণ্ডটি অবশ্যম্ভাবীভাবে ’৭১ পরবর্তী সময়কাল থেকে বর্তমান সময়পরিধি পর্যন্ত ধরার চেষ্টা থাকবে।
১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানাধীন ‘গুণী’ গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবি রফিক আজাদ। তার বাবার নাম সালিম উদ্দিন খান, মা রাবেয়া খান। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলের কাগমারীতে মওলানা ভাসানী। প্রতিষ্ঠিত এম.এম আলী কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ১১ নং সেক্টরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ জুট মিলস্ করপােরেশন ও বিরিশিরিতে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন তিনি ১৯৮৪-র ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮৭ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত সাপ্তাহিক রােববারের সম্পাদক ছিলেন। তার সম্পাদনা ও প্রকশানায় গ১৯৮৯ সালে পাক্ষিক ঘরে-বাইরে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্পেরর প্রশিক্ষক (কাব্যতত্ত্ব) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য। অসম্ভবের পায়ে (১৯৭৩) , সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে (১৯৭৪), নির্বাচিত কবিতা (১৯৭৫), চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (১৯৭৭), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮৬), স্বনির্বাচিত প্রেমের কবিতা, কবিতা সমগ্র (১৯৯৬) নির্বাচিত একশ’ কবিতা (২০০৬), প্রেম ও প্রকৃতির কবিতাসমগ্র (২০১০), মুক্তিযুদ্ধের কবিতা (২০১১), আলােয়-আধারে (২০১৫)সহ বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গুণী গ্রামের এই গুণী সন্তান বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১২ মার্চ ২০১৬ কবি রফিক আজাদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ফেরার দেশে।