১৯৪০-এর দশকে তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন ঢাকার একজন ছাত্র সংগঠক। ১৯৫৩ সালে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন। তাজউদ্দীন হন সাধারণ সম্পাদক। তিনি বরাবরই থেকে গেছেন মুজিবের ছায়ায়। থেকে গেছেন নেপথ্যে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। তাজউদ্দীন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নয়াদিল্লি যান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। ওই সময় তিনি যদি এই সিদ্ধান্ত না নিতেন, তাহলে ইতিহাস অন্য রকম হতো। দেশ মুক্ত হওয়ার পর তিনি সরকার ও দলের মধ্যে ধীরে ধীরে ব্রাত্য হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকেও বিদায় করে দেওয়া হয়। এটা ছিল তাঁর জীবনের একটা বড় ট্র্যাজেডি। বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্রান্তিকালের নায়ক ছিলেন তাজউদ্দীন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের তিনিই ছিলেন কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সম্পূর্ণ ইতিহাস লেখা যাবে না। এটি তাজউদ্দীন আহমদের জীবনীগ্রন্থ নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক পথপরিক্রমার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্বের আখ্যান। বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায় ১৯৭০ সালে। এই আখ্যানের শুরু সেখান থেকে। শেষ হয়েছে ১৯৭৫ সালে, তাঁর জীবনের বিয়োগান্ত পরিণতির মধ্য দিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের বই ‘এক-এগারো’ও তার পূর্বে প্রকাশিত বইগুলোর মতো পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, দিয়েছে জানা-অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সম্বন্ধে জানতে, বুঝতে এবং অনুসন্ধানী তথ্য পেতে তার বইয়ের তুলনা হয় না। মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমূহ হলো বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ, যেগুলোতে লেখক নিজের বিশ্লেষণী জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কোনো একটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করেছেন, তার সাথে জড়িতদের থেকে তথ্য নিয়েছেন, মিডিয়া গবেষণা করেছেন এবং বিস্তর তথ্যা ঘেটে সবচেয়ে প্রামাণ্য তথ্যটুকুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘ইতিহাসের যাত্রী’, ‘রাজনীতির অমীমাংসিত গদ্য’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘আওয়ামীলীগের উত্থানপর্ব: ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘আওয়ামীলীগ: যুদ্ধদিনের কথা’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আলোকিত মানুষ’, ‘এ্যালান পো’র শ্রেষ্ঠ গল্প’, ‘বোমা বন্দুকের চোরাবাজার’, ‘Seoul Diary’, ‘Elegy and Dream’- এর মতো পাঠকপ্রিয় বই নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমগ্র। মহিউদ্দিন আহমদ ১৯৫২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শিক্ষাজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সাথেও। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর মুক্তিযুদ্ধে তিনি ‘বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’ এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনজিও স্টাডিজ নামক একটি বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। কর্মজীবনে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠে কাজ করেছেন। বর্তমানে নিয়মিত কলাম লিখছেন প্রথম আলো পত্রিকায়। তার লেখা অধিকাংশ বই-ই প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।