মানুষ যখন ভয় পায়, তখন এডরেনেলিন নামের একধরণের হরমোনের নিঃসরণ হয়। বিপদজনক পরিস্থিতিতে কিংবা বিপন্ন পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটনাটি মোকাবেলার করার জন্য শরীর এক ধরণের ‘ফাইট, ফ্লাইট অর ফ্রিজ” মুডে চলে যায়। এসময় স্ট্রেস হরমোন হিসেবে এডরেনিলিনের ক্ষরণ হয়। এডরেনিলিন রাশের সময় সাধারণত মানুষের নিজেকে বেশি সজীব মনে হতে পারে। সঙ্গে ভয়কে জয় করার আত্মতৃপ্তি তো আছেই। এছাড়া চট করে ভয় পেলে তারপর অনুভূতির যে অদ্ভুত মিশেল তৈরি হয়, তাতে মনের চাপ অনেকটূকু কমতে পারে। এজন্যই মানুষ ভয়ের গল্প এমন পছন্দ করে, হরর জনরাটিকে এমন ভালোবাসে। নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে হরর গল্প পড়বার সুখ আছে অনেক। মানুষের ব্রেন পড়বার সময়ে ভয়ের অনুভূতিকে আসল আর নকলের ভিত্তিতে আলাদা করতে পারে না। ভয়কে সে আলাদা করে কম বিপদ আর বেশি বিপদের পাল্লায়। এবং তাই কাল্পনিক কাহিনি হলেও আপনি ঠিকই রাশ পাবেন। মস্তিষ্কের থ্যালামাস থেকে যখন বিপদকে আঁচ করে এমিগডালায় পাঠানো হয়, তখনও মানুষ মোটামোটি স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু এমিগডালা যদি একবার বিপদটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বসে, তবেই শেষ, অস্বস্তির শুরু। ভয়ভয় লাগে না আমাদের? এই কারণেই লাগে। এমিগডালায় ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়া মাত্র হাইপোথ্যালামাস থেকে স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ হওয়া শুরু হয়, যার ভেতর এড্রেনেলিনও আছে। ভয়ের কথা শুনার সময়, ভূতের গল্প পড়ার সময়, হরর মুভি দেখার সময়, কিংবা অস্বাভাবিক কোনও অভিজ্ঞতায় পড়বার সময় আমাদের চোখমুখ শুকিয়ে এসে বুক ধুকপুক করতে শুরু করে না? কপালে, শরীরে ঘাম জমে উঠে না? এসবই তার প্রভাবে হয়। নিশুতি সিরিজের সবগুলি বই এক অজানা অচেনা ভয়কে ঘিরে। যা মানুষ মনের অজান্তেই লালন করে এবং ভয় পেতে ভালোবাসে।
ওয়াসি আহমেদে পেশায় চিকিৎসক। বই লেখা, বই পড়া, বই সংগ্রহ করা এবং বইপত্র নিয়ে আলোচনায় মেতে থাকা- জীবনের এই বৈচিত্র্যকে উপভোগ করেন সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত সংগ্রহে বইয়ের সংখ্যা ১৫ হাজারের অধিক। হারুকি মুরাকামি, পাওলো কোয়েলহো, নিল গেইম্যান, জেমস রলিন্স, শার্লি জ্যাকসন, জো নেসবো-সহ পছন্দের লেখকদের বেশ কিছু বই অনুবাদ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গল্প সংকলন। প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থ- 'আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে', 'যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার', 'হান্নান বোতলে পরী আটকে রাখে', 'মৃতদের স্মরণে সমবেত প্রার্থনা', 'আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান'।