মন্দাক্রান্তা ছন্দ বাংলা কবিতার জগতে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, যার সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য সহজেই পাঠকের মন কাড়ে। এটি মূলত সাত মাত্রার ছন্দ, যার প্রত্যেক পঙক্তিতে মাত্রাবিন্যাস হয় ৩ ৪ এর ছকে। মন্দাক্রান্তা শব্দের অর্থ হলো ‘মৃদুভাবে চলমান’। এই ছন্দে কবিতার লয় ধীর ও মোলায়েম, যা পাঠের সময় মনকে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে ফেলে। বাংলা সাহিত্যে মন্দাক্রান্তা ছন্দের প্রয়োগ মূলত প্রেম, প্রকৃতি এবং মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এই ছন্দের বৈশিষ্ট্য এমন যে, এটি সহজেই একটি আবেগপূর্ণ এবং সংবেদনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম। অনেক বিখ্যাত কবি, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত- এই ছন্দের মাধ্যমে তাঁদের কবিতায় অনন্য মাধুর্য যোগ করেছেন। আধুনিক কবি অনিরুদ্ধ আলমের মন্দাক্রান্তা কবিতাসমূহ মূলত প্রকৃতির প্রতি আবেগপূর্ণ অনুভূতি এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে। বাংলা সাহিত্যে মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত কবিতা দেখা গেলেও, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র মন্দাক্রান্তা ছন্দের উপর এককভাবে কোনো কবিতা সংকলন বা বই প্রকাশিত হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন কবি মন্দাক্রান্তা ছন্দে কবিতা লিখেছেন, তবে এই ছন্দে একক বই হিসেবে পূর্ণাঙ্গ একটি সংকলন সম্ভবত ‘তাহমিনা নিশা’ এর প্রথম উদ্যোগ হতে পারে। “মন্দাক্রান্তা” শিরোনামের বইটি এই ছন্দকে এককভাবে প্রকাশের মাধ্যমে একটি অনন্য উদ্যোগ এবং বাংলা ছন্দশাস্ত্রে নতুন দিক উন্মোচন করবে বলেই আশা করা যায়।
কবি তাহমিনা নিশা খুলনা জেলার খালিশপুরে ২২ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাজুমারা গ্রামে। ছােটবেলা থেকেই কবি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড , সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। স্কুল জীবনে পড়ার সময়েই কবির লেখালেখির সূত্রপাত হয়। মাঝে স্বল্প বিরতি পড়লেও বর্তমানে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ছােট কাগজে লিখে চলেছেন নিয়মিত। লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তিকার ও সংগঠক হিসেবেও কৰি পৰিচিত। তিনি রেডিও বাংলাদেশ খুলনার লিষ্টেড শিল্পী। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও বাংলাদেশ বেতার খুলনায় গান, নাটক, কথিকা পাঠে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে মিস্ বাঙ্গালী প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিবি রাসেল ও ডক্টর ইউনুসের সাথে “পজেটিভ বাংলাদেশ” নিয়ে সারা। বিশ্বে কাজ করেছেন। সেই সময় বাংলাদেশের তাঁত শিল্প ও “গ্রামীণ চেক” কাপড়কে বিশ্ব বাজারের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠন অনুশীলনের সদস্য ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনােবিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি একজন সাইকোলােজিষ্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তাহমিনা নিশার “ওরা দু’জনে” ও “ভালবাসার আঁচড় নামের দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২২ এর বই মেলায় প্রকাশিত ”পাখির মতাে তার ৪র্থ গ্রন্থ। এটি প্রথম কবিতার বই হলেও কবিতার প্রচলিত ধারণার ভেতরেই রয়েছে তার স্বতন্ত্র ও নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও কর্মকৌশল। প্রাচীন বাংলার আবহমানশেকড়ে দাঁড়িয়ে সারা জগতের শিল্পস্বার আস্বাদনের প্রত্যয় তার ভাবনার মাঝে। নতুন শতকে আমাদের কালের যারা পরিশ্রমী শব্দসৈনিক, সেই অনেকের মাঝে খানিকের কাছে বা দূরে- তাহমিনা নিশা একজন।