সুস্থতা মহান আল্লাহর দান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থতা রক্ষণের বিধান দিয়েছেন এবং অসুস্থতায় চিকিৎসা গ্রহণের গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা ওষুধ এর ব্যবস্থাপনা কর কেননা মহান আল্লাহ যত রোগ সৃষ্টি করেছেন প্রতিটির ওষুধও সৃষ্টি করেছে। প্রয়োজনের তাগিদে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ওষুধ ব্যবহার করেছেন এবং বিভিন্ন সময় সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন শারীরিক ও আত্মিক অসুস্থতার চিকিৎসা প্রদান করেছেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রচিত চলমান গ্রন্থটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বিভিন্ন চিকিৎসা পরামর্শের সামগ্রিক রূপ। যেখানে বিভিন্ন রোগের মৌলিক কারণ, অসুস্থ হওয়ার পথ রুদ্ধ করা বিভিন্ন প্রতিষেধক এবং ওষুধের সহজ পদ্ধতি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে মনস্তাত্তি¡ক বিভিন্ন পদ্ধতির পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের ঐশী পদ্ধতিতে প্রাপ্ত চিকিৎসা পদ্ধতির সামনে তা কোন অবস্থানই রাখে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্ভুল চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকরিতা অনস্বীকার্য ও নজিরবিহীন। আল্লাহ রাসূলের দেখানো চিকিৎসা পদ্ধতির সম্মিলিত রূপের এই গ্রন্থটি একদিকে যেমন অসুস্থ ব্যক্তিদের হাতের নাগালে বিভিন্ন কার্যকরি ঔষধ এর সন্ধান দিবে পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও গবেষকগণের সামনে চিকিৎসা জগতে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। পাঠকদের জন্য এতে রয়েছে উন্নত চিকিৎসা চারিত্রিক উন্নত আদর্শ ও আত্মিক সাধনার এক ভান্ডার।
ইমাম যাহাবীর ছাত্র তাজ-উদ-দীন আব্দুল ওয়াহ্হাব আস-সুবকী বলেন, “আমাদের শাইখ ও উস্তায ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ আত-তুর্কমানী আয-যাহাবী যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিনি নজির-বিহীন। তিনি এমন এক গুপ্তধন, যার কাছে আমরা সমস্যায় পতিত হলে ছুটে যাই। হিফযের দিক থেকে সৃষ্টিজগতের সেরা। শাব্দিক ও অর্থগতভাবে তিনি খাঁটি সোনা। ‘জারহ ও তাদীল’ শাস্ত্রের পণ্ডিত। ‘রিজালশাস্ত্রে’ তিনিই বিজ্ঞ। যেন সমগ্র উম্মাহর লোকজনকে একটা প্রান্তরে একত্র করা হয়েছে, আর তিনি তাদের দেখে দেখে তাদের ব্যাপারে বলছেন। তার জন্ম ৬৭৩ হিজরী সনে। আঠার বছর বয়সে তিনি হাদীস অন্বেষণ শুরু করেন। দামেস্ক, বা‘লাবাক্কা, মিশর, আলেকজান্দ্রিয়া, মক্কা, আলেপ্পো, নাবুলসসহ নানা শহরে তিনি গমন করেন। তার শাইখের সংখ্যা অগণিত। তার থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ হাদীস শুনেছে। তিনি হাদীস-শাস্ত্রের খেদমতে রত ছিলেন, এমনকি এ ব্যাপারে গভীর জ্ঞানে পৌঁছেছেন। দামেস্কে অবস্থান নিলেন। সকল দেশ থেকে তার উদ্দেশ্যে লোকজন আসতে থাকল। ‘আত-তারীখুল কাবীর’ তিনি রচনা করলেন। আরও লিখলেন ‘আত-তারীখুল আওসাত্ব’ যেটা ‘ইবার’ নামেও পরিচিত। সেটা বেশ সুন্দর। আরেকটা ছোট বই লিখেলেন, ‘দুওয়ালুল ইসলাম’। এছাড়া ‘কিতাবুন নুবালা’ ও ‘আল-মীযান ফিদ-দুয়াফা’ রচনা করেন। শেষোক্ত বইটি সর্বশ্রেষ্ঠ বই। আরও রচনা করেন ‘সুনান বাইহাকী’র মুখতাসার। এটিও ভালো। লিখেছেন ‘ত্বাবাকাতুল হুফ্ফায’, ‘ত্বাবাকাতুল ক্বুর্রা’-সহ আরও নানা সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। বিভিন্ন রেওয়ায়াতে তিনি কুরআন শিখেন এবং শিক্ষা প্রদান করেন। ৭৪৮ হিজরী সনে তিনি মারা যান। মৃত্যুর কিছু দিন আগ থেকে তিনি চোখের জ্যোতি হারিয়েছিলেন।” [ত্বাবাকাতুশ শাফেইয়্যা আল-কুবরা: (৯/১০০-১২৩)।]