বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগণার মুরাতিপুরে সংস্কৃত প-িত দরিদ্র বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে জন্ম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জন্ম ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ সালে এবং মৃত্যু ১ নভেম্বর, ১৯৫০ সালে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ভূতে বিশ্বাসী ছিলেন। পরলোকের ওপর তাঁর আগ্রহ ও বিশ্বাসের কারণ ছিল তাঁর প্রথম স্ত্রী-র অকালমৃত্যু। তাঁর গল্পের অলৌকিক উপকরণগুলো বিচিত্র। সেখানে ছায়ামূর্তি আছে, ডাকিনী আছে, প্রেতাত্মা আছে, আছে তন্ত্র-মন্ত্র, আছে আতঙ্ক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর বাড়িতে তাঁর জন্ম, মৃত্যু ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর লেখালেখির সূচনা পদ্য রচনা দিয়ে। ১৩ বছর বয়সে ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘কুমার সম্ভব’ অনুবাদ করেন বাংলার ছন্দে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক ভৌতিক বা অলৌকিক গল্প লিখেছিলেন জীবদ্দশায়, এসব গল্পের গ্রন্থভুক্তি ঘটেছে দু’দুবার ‘বিচিত্র গল্প’ শিরোনামে। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রেই প্রকাশিত হয়। তাঁর বেশিরভাগ গল্প মূলত প্রকাশিত হয় ৫টি পত্রিকায়। এছাড়াও বেশ কিছু গল্প প্রকাশ পায় তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে। ১২টি ভৌতিক বা অলৌকিক গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই গ্রন্থে।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (৩০ মার্চ ১৮৯৯-২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭০) ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর শহরে নিজ মাতুলালয়ে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পসমূহের মধ্যে ‘ভূতজ্ঞানী’ বরদার গল্পসহ অন্যান্য ভৌতিক ও অলৌকিক গল্পগুলো বিশেষ জনপ্রিয়। ১৯১৫ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত সময়কালে বেশ কিছু ভৌতিক ও অলৌকিক গল্প রচনা করেছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এগুলো শরদিন্দু অম্নিবাসের পঞ্চম খ-ে সংকলিত হয়েছে। এই গ্রন্থে শরদিন্দুর ভৌতিক ও অলৌকিক গল্পগুলো সংকলিত হলো।
মঞ্জিল সেন। নানা ধরনের গল্প লিখলেও মূলত ভূতের গল্পের লেখক হিসেবে তাঁর স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে ওঠে। বিষয় ও পরিবেশ সৃষ্টির বৈচিত্র্যে নানা ধরনের ভৌতিক ও অলৌকিক গল্প লিখেছেন তিনি। পরিবেশ সৃষ্টিতে গ্রাম থেকে শহরে, কখনো-বা গৃহকোণ, কখনো-বা হানাবাড়ি, পার্বত্য অঞ্চল, খনি বা জলপথে তাঁর গল্পের গতি এগিয়ে যায় ও পাঠকের কৌতূহল জাগিয়ে রাখে। গল্পের সমাপ্তিও হয় আশ্চর্য এক সমাপতনের মধ্য দিয়ে। কখনো সরাসরি বিশ্বের নানাপ্রান্তে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাকেও গল্পের স্বাদে পাঠকদের পরিবেশন করেন। এক্ষেত্রেও স্বীকার করতে হয় হেমেন রায়ের মতো তাঁরও বেশ কিছু গল্পে বিদেশি কাহিনির ছায়া এসে পড়েছে। কাহিনিসার বিদেশি গল্পের কিন্তু পাত্রপাত্রী ও পরিবেশে স্বদেশি মাটির গন্ধ পাওয়া যায়।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। জন্ম ১৪ অক্টোবর ১৯৩০, মৃত্যু ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২। বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি লেখক। ১৯৯৪ সালে তিনি তাঁর অলীক মানুষ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, যা তাঁর সবচেয়ে প্রশংসিত কাজ হিসেবেও বিবেচিত হয়। তিনি প্রায় ১৫০টি উপন্যাস এবং ৩০০টি ছোটগল্প রচনা করেছেন। সিরাজের লেখা ভৌতিক গল্পের সংখ্যা প্রচুর। তাঁর লেখা অনেক ভৌতিক কাহিনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে হলেও, মূলত সব বয়সের পাঠকের কথা মাথায় রেখেই লিখেছেন তাঁর সিংহভাগ ভৌতিক কাহিনি। প্রসঙ্গত, বাংলার ‘হরর কমেডি’ ধারার অন্যতম প্রাণপুরুষ তিনিই।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।