সিরাজ-উ-দ্দৌলা বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব। চক্রান্তের শিকার স্বাধীনচেতা ও তেজস্বী নবাবের জীবনের বেদনাময় করুণ পরিণতি। সিরাজ-উ-দ্দৌলা ১৭৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৭৫৬ সালের ১৯ জুন যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩ বছর। মাত্র ১ বৎসর ১৬ দিন নবাবের দায়িত্ব পালন করে তিনি ১৭৫৭ সালের ২ জুলাই নিহত হন। তবে তাঁর দুর্ভাগ্য এই যে এই সময়ের মধ্যে তিনি একটি দিনের জন্যও শান্তিতে নবাবী করতে পারেননি। ক্ষমতায় আরোহণ করেই তাঁকে জটিল চক্রান্তের মুখোমুখি হতে হয়। পূর্বোল্লেখিত সম্রাট ফররুখ শিয়ারের বাণিজ্য ফরমানের সূত্র ধরেই বাংলার নবাবদের ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্য করার বাধাদানের ফলে তাঁদের সঙ্গে সংঘাতের শুরু হয়। বলা যায় তরুণ নবাব একপ্রকার উত্তারিধকার সূত্রেই নবাবী মসনদের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষাপটকেও লাভ করে। নবাবের আমির অমাত্যগণ মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকে ভূমিরাজস্ব সূত্রে নানা আর্থিক সুবিধা লাভ করে তারা যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হয়।
মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকেই ভূমিরাজস্ব বিভাগে এ দেশীয় অমাত্য নিয়োগ গুরুত্ব পায়। নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলার আমলে এরাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে ব্যাপক ব্যবসা বাণিজ্যের সূত্র ধরে এই বণিক সংগঠনের সঙ্গে নিজেদের ভাগ্যকেও একসূত্রে গেঁথে ফেলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সিপাহসালার মীর জাফর আলী খান, ঘসেটি বেগমের মতো রাজদরবারের ব্যক্তিত্ব এবং ঘনিষ্ট আত্মীয়ের অর্থ ও ক্ষমতা লালসা। এদের সহযোগি রায়দুর্লভ এবং ইয়ারলুৎফও ছিলেন সেনাধ্যক্ষ। যে কারুর পক্ষেই এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়া দুরূহ ছিল। একজন তরুণ নবাবের পক্ষে তো আরো বেশি। তাই বলা যায় যে সিরাজ-উ-দ্দৌলার ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিতই ছিল। কিন্তু এই নির্ধারিত ভাগ্যকে প্রতিহত করে অতিক্রম করার জন্য নবাব কম চেষ্টা করেননি। সকল বিশ্বাসঘাতক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা ও নির্মূল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।