বইয়ের ভুবন এক বিচিত্র পৃথিবী। তার স্রষ্টা ও সৃষ্টির কাহিনী নানা রঙের, নানা স্বাদের। তাদের কতটুকুই বা আমরা জানি! আবার সে বই যদি হয় বিদেশি, তা হলে বৈচিত্র্যের সম্ভার হয়ে ওঠে অনিঃশেষ। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন ভাষায় রচিত প্রায় আশিটি বইয়ের বহুমাত্রিক আলোচনা এই গ্রন্থের সম্পদ। এখানে আর্নল্ড টয়েনবি ও কামু, হেমিংওয়ে এবং ও’হেনরি, বোদলেয়ার ও কোয়াসিমোদো, বার্নার্ডশ ও পার্ল বাক, বোভোয়ার এবং পাস্তেরনাক, কিংবা গগোল, কীট্স, মোরাভিয়া, মোপাসাঁ, ফ্রয়েডের পাশে ইউজিন ও'নীল অথবা নইপালের অপূর্ব সহাবস্থান। বেতাল পঞ্চবিংশতির একটি পুরনো কাহিনীকে কী অপূর্ব কৌশলে টমাস মান আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে রূপান্তরিত করেছেন তার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হতে হয়। যে-সমস্ত বইয়ের পটভূমি রচিত হয়েছে ভারতের কোনও জায়গায় কিংবা আমাদের চেনা কলকাতায়, চরিত্রলিপিতে এসেছে ভারতীয় সমাজ জাতি কিংবা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার, সেই বইগুলি খুঁজে এনেছেন লেখক। জানিয়েছেন, লেখকরা কীভাবে লেখেন তার কথা এবং তাঁদের শিল্পকৌশলের রহস্য। গ্রন্থবহির্ভূত নানা প্রসঙ্গের সংযোজনায় এ বইয়ের প্রতিটি বিষয় স্বয়ং সম্পূর্ণ, তথ্যবহুল ও চমকপ্রদ। আধুনিক ইংরেজি, ফরাসি এবং দূর প্রাচ্যের সাহিত্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করতে এই বই অদ্বিতীয়। এক ক্লান্তিহীন অবকাশযাপনের সঙ্গী তো বটেই, ‘দূরের বই' একই সঙ্গে হয়ে উঠেছে কৌতূহলী পাঠকের কাছের স্বজন।
চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৫ সালে, বিক্রমপুর, ঢাকায়। শিক্ষা: ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনের প্রথমে জাতীয় গ্রন্থাগারের উপ-গ্রন্থাগারিক। পরবর্তীকালে সেন্ট্রাল রেফারেন্স লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক। গ্রন্থাগার আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। শ্ৰীবন্দ্যোপাধ্যায় প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, গবেষক ও গ্রন্থসম্পাদক। তাঁর সম্পাদিত বিশিষ্ট গ্রন্থ আনন্দমঠ (রচনার প্রেরণা ও পরিণাম), রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ: আনন্দবাজার (চারখণ্ড)। বিদেশি সাহিত্য সম্পর্কে লেখকের অন্যান্য বই : সোনার আলপনা, বিশ্বসাহিত্যের আঙিনায়, লেখকের গল্প। দুরের বই এই ধারায়, আর একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।