কীভাবে নির্মান করা যাবে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, উন্নত, অগ্রসর, সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও কল্যাণমূলক বাংলাদেশ, যাকে বিশ্ব গোনায় ধরবে? যেখানে তরুণদের জন্য থাকবে সম্মানজনক কর্মসংস্থান, থাকবে একটি গণমুখী প্রশাসন যা জনগণের প্রভু নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে, থাকবে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা বিশ্বকে নেতৃত্বে দেয়ার মত জনসম্পদ গড়ে তুলবে? এই দেশকে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তারিত রূপরেখা ও কৌশল প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এই বই লেখা। সংস্কার করার মাধ্যমে আমরা কেমন রাষ্ট্র নির্মান চাচ্ছি, তার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়ে বইটি শুরু করা হয়েছে। একেক জাতির জাতিগত বৈশিষ্ট একেক রকম। এক জাতির জন্য যে পথ সাফল্য বয়ে আনে অন্য জাতির জন্য তা নাও কাজ করতে পারে। এ কারণে রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্র এবং কৌশল নির্ধারণের আগে বাঙালি জাতির আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে কোন পরিস্থিতিতে বাঙালির উত্থান হয় আর কোন অবস্থায় পতন ঘটে, কখন সে বিকশিত হয় আর কখন ঝিমিয়ে পড়ে। চিহ্নিত করা হয়েছে বাঙালির শক্তি ও দুর্বলতাগুলো। পাশাপাশি যে সব জাতি পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছে বা দিচ্ছে, তাদের মৌলিক বৈশিষ্টগুলোর সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা হয়েছে। এর পর সংস্কারের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সংস্কারের নিউক্লিয়াস-কে, অর্থাৎ, যে সংস্কার না করলে অন্য সংস্কারগুলো কার্যকর ও টেকসই হবে না। তুলে ধরা হয়েছে সংবিধান, সংসদ, নির্বাচন পদ্ধতি - ইত্যাদির সংস্কারের নানা বিকল্প। এর পর বিভিন্ন ক্ষেত্র ও মন্ত্রণালয় ধরে ধরে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার সবচেয়ে জটিল ও কঠিন একটি বিষয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়া অবধারিত। সঠিক এবং স্মার্ট কৌশলে অগ্রসর না হলে লেজে-গোবরে অবস্থা হতে পারে। এ কারণে রাষ্ট্র সংস্কারের কৌশল নিয়েও বইটিতে আলোকপাত করা হয়েছে।
আমিনুল মোহায়মেন পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন খাতের সংস্কারে। বাংলাদেশের সংবিধান, সংসদের কার্যক্রম ও কার্যপ্রণালী, রাষ্ট্র কাঠামো, সুশাসন ও জবাবদিহিতা, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম ও কর্ম সংস্থান, মহিলা ও শিশু কল্যাণ, সমাজ কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তি - ইত্যাদি ক্ষেত্রে রয়েছে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মানব সভ্যতার ইতিহাস ও ক্রমবিকাশের উপর গবেষণালব্ধ সাড়া জাগানো বই ‘ত্রিশ জাতির ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের উত্থানযাত্রার পথ’ - এর তিনি লেখক। ত্রিশ বছরের পেশাগত জীবনের প্রায় পুরোটা সময় ধরে তিনি কাজ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অটোমেশনের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন আর্থার এন্ডারসন নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানে। তারপর দেশে ফিরে যোগ দেন প্রশিকাতে, কম্পিউটার বিভাগের প্রধান হিসেবে। জন্ম ঝিনাইদহে, সেখানেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা এবং দুই পরীক্ষাতেই সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি, ভালো না লাগায় বছরখানেক পর সরকারি বৃত্তি নিয়ে মিশরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। জ্ঞান ও গবেষণার বহুমাত্রিকতায় আমিনুল মোহায়মেনের বিচরণ। একদিকে যেমন তিনি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, তেমনি মানব সভ্যতার ইতিহাস ও উত্থান-পতন নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বই লিখেছেন, আবার পড়াশোনা করেছেন সুশাসন, সামষ্টিক অর্থনীতি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ধর্ম নিয়ে, যা তাকে দিয়েছে রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি এবং ভ‚রাজনীতিকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার দুর্লভ ক্ষমতা।