বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বেশিরভাগ সাধারণ নির্বাচন সবসময়ে নানা ধরনের কারচুপির অভিযোগে কলঙ্কিত। ১৯৯৬ সালে সংসদে সর্বদলীয় মতামত গ্রহণের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রবর্তিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর দায়িত্ব বর্তায় যে এই সরকার নির্বাচন কমিশনকে তিনমাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করতে সহায়তা করবে। কিন্তু, ২০০৭-২০০৮ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ২৩ মাসের অধিক সময়ে ধরে ক্ষমতায় অবস্থান করে। এই গবেষণার লক্ষ্য হলো ২০০৭-২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় ছিল। তা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করা। এই সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক ধরনের বাধা সৃষ্টি করে যা একটি অপ্রচলিত শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটায়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুশীল সমাজ ও সেনাবাহিনীর কিছু ব্যক্তিকে একত্র করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধীনস্থ করে। এই গ্রন্থটি সেই আমলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরে। লেখক অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর তৎকালীন সরকারের প্রভাব পর্যালোচনা করেন, এবং লেখক তখন নিজেও কারারুদ্ধ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত ঘটনাবলি নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করেছিল, তা নিয়েও এই বইতে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়া উদ্ভূত ষড়যন্ত্র, তত্ত্ব ও আপোষমূলক আচরণকে বিশ্লেষণ করে।
Moudud Ahmed ১৯৪০ সালের মে মাসের ২৪ তারিখ নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগণঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স্ ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন। ১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১-এ মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী জেলার কম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে মওদুদ আহমেদ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রীত্ব ছাড়াও মওদুদ আহমেদ জিয়াউর রহমানকে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এই দলের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এরশাদের জাতীয় পার্টির সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।