"ইউরোপ পুনর্দর্শন" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সাহিত্য এবং শিল্পের মতাে ইতিহাসও যে জীবনের বিচিত্র সম্ভাবনার স্বাদ আমাদের কাছে পৌছে দিতে পারে—এই কথাটাই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন সুখ্যাত ঐতিহাসিক তপন রায়চৌধুরী। সমাজশাস্ত্রভিত্তিক এবং অন্য ধরনের বিশ্লেষণী আলােচনার বাইরেও মানুষের জীবনে ইতিহাসের যে একটা মূল্য রয়েছে—এই ধারণাতে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি শুরু করেন আধুনিক বাঙালীর মনােজগতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা। তারই আংশিক ফসল এই অনবদ্য আলােচনা-গ্রন্থ। উনিশ শতকের শিক্ষিত বাঙালীর চোখে ইউরােপের চেহারাটা কেমন ছিল—তারই সন্ধান এই গ্রন্থে। উনিশ শতকের যে-তিনজন মনীষীর ইউরােপ-চিন্তাকে আবর্তিত করে এই চেহারাটার সর্বাঙ্গীণ পরিচয় এখানে, তাঁরা হলেন যথাক্রমে ভূদেব মুখােপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বামী বিবেকানন্দ। পাশ্চাত্য সম্বন্ধে ভারতীয়দের ধারণা বিষয়ে এতকাল প্রায় কিছুই লেখা হয়নি, সেই অভাব মেটাবে এই বই, যেখানে উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জটিল ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ মূল্যায়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এই মনীষীত্রয়ীর চিন্তাধারার ব্যাপক পরিচয়। তদুপরি, মূল্যায়নের বৈচিত্র্যের উৎস যে ব্যক্তিত্বের বিভিন্নতায় এবং জীবনের অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যেতার প্রতিও পাঠকের দৃষ্টি ফেরাতে চেয়েছেন লেখক। দেখিয়েছেন, সময়ের দিক থেকে সমসাময়িক হওয়া সত্ত্বেও ইতিহাসের দ্রুতগতির কারণে মানসিকতায় কীভাবে প্রজন্মের ব্যবধান ঘটে গিয়েছিল এই চিন্তানায়কদের মধ্যে। বহু দুর্লভ ও মূল্যবান তথ্যে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ। সংকলিত তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একইসঙ্গে যেমন স্বকীয়তায় উজ্জ্বল এই আলােচনাগ্রন্থ তেমনই প্রশংসনীয় আলােচকের নৈর্ব্যক্তিকতা। বছর সাতেক আগে ইংরেজী ভাষায় গ্রন্থাকারে বেরুনাে এই বইটিকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন শ্রীমতী গীতশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাংলা সংস্করণের জন্য লেখক নিজেই যুক্ত করেছেন নতুন একটি ভূমিকা
Tapan Roychowdhury জন্ম ১৯২৬ সালে, পূর্ববঙ্গের কুমিল্লা শহরে। পৈতৃক ভিটে বরিশালের কীর্তিপাশা। শিক্ষা বরিশাল জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং অক্সফোর্ডের বেলিয়াল কলেজে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ইতিহাস ও সভ্যতার প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সেন্ট অ্যান্টনিজ কলেজের প্রাক্তন ফেলো। প্রথম জীবনে পড়িয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে জাতীয় অভিলেখাগারের সহকারী অধ্যক্ষ, দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যক্ষ ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক পদে বৃত ছিলেন। এ ছাড়া হার্ভার্ড, পেনসিলভেনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে অধ্যাপনা করেছেন। তার লেখা গ্ৰন্থ ইউরোপ রিকনসিডার্ড’ ১৯৮৭ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার পায়। “রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্ৰাপ্তর পরিচারিতচর্চা” তার লেখা প্রথম বাংলা বই। কলকাতা, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি. লিট ও ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত ড. রায়চৌধুরী ভারতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ।