আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক সময়ই ব্যর্থতার সম্মুখীন হই, আমরা পথ হারিয়ে ফেলি, আমরা একটি সঠিক সুরাহা চাইলেও আমাদের অমনোযোগী আচরণ অনেক সময়ই তা দূরে ঠেলে দেয়, সঙ্গীরাও খোলস পড়ে থাকে, টেনে নেয় বিপথে। কোনটা অামাদের জন্য ভালো কোনটা ক্ষতিকর এ বিবেচনাবোধ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে প্রবৃত্তির অন্ধকামনায়, তখন আলোর ক্ষীণ কিরণের জন্যও মন বিমর্ষ হয়ে থাকে সবসময়। অথচ মনের অন্যদিক মেতে থাকে অন্ধকারের জলকেলিতে।
কুরআন ও হাদিসে মুমিনের সফলতার পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে। কুরআনে যেমন নারী-পুরুষকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাদিসেও উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞা ও দৃষ্টির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিষয়ে সতর্কবাণী এসেছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ আলেমদের উপলব্ধির নিগূঢ় থেকে কুদৃষ্টি ক্ষতিকর প্রভাব ও সমকালিন সমস্যার নিরসন নিয়েও আছে চমৎকার বয়ান।
বিশ্ববরেণ্য আলেম পাকিস্তানের শরিয়া বোর্ডের সাবেক জাস্টিস শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানি সাহেব (হাফি.)-এর চোখের হেফাজত ও সফলতার রাজপথ আবিষ্কারমূলক বিভিন্ন বক্তব্যের সার নির্যাস ও উদীয়মান লেখক ও সম্পাদক মাহদী আব্দুল হালিমের যুগপৎ অভিজ্ঞতার সারাৎসার-চোখের হেফাজত বইটি। বইটিতে কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি ছাড়াও গল্প ও শিক্ষার আলোকে সমস্যা ও সমাধানের পথ সযত্নে আলোচিত হয়েছে।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।