সাহিত্যে দৃষ্টিশীলতা এবং দৃষ্টিহীনতার স্বরূপ বিষয়ে খানিক আন্দাজ দেয়াই এই সংকলনের উদ্দেশ্য। সৃজনশীল সাহিত্য মূলত একটি অভিজ্ঞতানির্ভর প্রপঞ্চ, আর দৃষ্টি-সংবেদন প্রাণবিক অভিজ্ঞতাগুলোর মূল স্তম্ভগুলোর একটি। তাই, এক অর্থে, সাহিত্যের ইতিহাস চোখ মেলে দেখারই ইতিহাস। আবার, ঐতিহাসিক দিক থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যেহেতু প্রায় দৃষ্টিশীলতার মতই প্রাচীন, তাই সাহিত্যের ইতিহাস এক অর্থে চোখ মেলে দেখতে না পারার বেদনা ও সংগ্রামের ইতিহাসও বটে। এই দুয়ের নির্যাসকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে মলাটবন্দী করা হয়েছে এই বইয়ে। উদ্দেশ্য, এই ধরনের সাহিত্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দৃষ্টিসংবেদন-এর উন্নয়ন তত্ত্বকাঠামোটি কোনোভাবে লাভবান হয় কিনা দেখা। br/br/ কেউ কেউ যেমন বলেন, চোখ মনের আয়না। br/br/ এটি আরো সত্য হয়ে ওঠে, সম্ভবত, চোখের সাথে জানলার তুলনা করলে, যে জানলা দিয়ে মন বাইরের বহুবর্ণিল জগতকে উপভোগ করে। কে বলতে পারে, আমাদের মানসিক গড়নের কোন্ অংশ দৃষ্টি সংবেদন থেকে আসে? এই যে অনাদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত জীবনের শৃঙ্খলাবদ্ধ বিস্তার, সেখানে একজন মানুষ একটি যোগাযোগসূত্র মাত্র। এরকম একটি যোগাযোগসূত্র হল অন্ধ বালকটি যার ক্ষেত্রে নিষ্ঠুর নিয়তি জানলাগুলো বন্ধ করে রেখেছে। তার সারাজীবন অন্ধকারে কাটাবার জন্য। কিন্তু তার মানে কি এই যে, তার আত্মার মধ্যে দেখার বাসনা কোনোদিনই জাগ্রত হতে পারবে না? না! এই গাঢ় তমসার মধ্যেও আত্মার দেখার বাসনা ফল্গুধারার মত বয়, তৃষ্ণাটুকু পরের প্রজন্মে পৌঁছানোর জন্য। অন্ধ বালকটির আত্মা একটি স্বাভাবিক মানুষের আত্মা, স্বাভাবিক মানবিক গুণাবলিসমেত। প্রত্যেকটি মানবিক গুণই যেহেতু পূর্ণতার দিকে ধাবিত হয়, তাই অন্ধকারে থাকা আত্মাটিরও আলোর কাছে যাবার অজেয় বাসনা থেকে যায়। br/br/ br/br/ br/br/ br/br/
সুমন রহমান-এর জন্ম ১৯৭০ সালে কিশােরগঞ্জ জেলার ভৈরবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দক্ষিণ এশীয় অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে। সর্বশেষ পিএইচডি করেছেন সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস। বাংলাদেশের গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিষয়ের অধ্যাপক। সাহিত্যের সব শাখাতেই সমানভাবে স্বচ্ছন্দ সুমন রহমান। দুটো কবিতাগ্রন্থ, দুটো গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে তার। ছােটগল্প “নিরপরাধ ঘুম” এর জন্য ২০১৬ সালে কমনওয়েলথ ছােটগল্প পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছিল তার নাম। “নিরপরাধ ঘুম” গল্পগ্রন্থটি ২০১৯ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই পুরষ্কার পায়।