ডক্টর মোহাম্মদ সাদিক তাঁর 'সিলেটি নগরী: ফকিরি ধারার ফসল' শীর্ষক ব্যতিক্রমধর্মী গবেষ প্রকল্পে আরও একবার প্রমাণ দিলেন যে, সর্বব্যাপ্ত অন্ধকারের মধ্যেও কেউ না কেউ আলোর প্রত্যাশায় জেগে থাকে। আলোর আবিষ্কারেই প্রতিষ্ঠিত হয় আলোর অপরিহার্যতা। বাংলার রাষ্ট্রসীমা থেকে বহুদিন নির্বাসিত থেকেও সুন্দর শ্রীভূমি শিকড়ে জলের ঘ্রাণ ভূলে যায়নি। তাই বৃহত্তর সিলেটের কোনও এক সন্তান, বহু তরঙ্গমন্বিত আশির দশকের অন্যতম সেরা কবি হয়েও, মনন-চর্চার কাছে তার দায় ভুলে যায় না। সেই সঙ্গে খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বিদ্যায়তনিক গবেষণার জন্যে বেছে নেয় শিকড়-সংলগ্ন আলোর কথকতাকে। আরও একটি কথা না- লিখলেই নয়, প্রায় সমস্ত গবেষক বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে তাৎক্ষণিক ইচ্ছার ওপর নির্ভর করেন এবং কাজ শুরু করেও দ্বিধা ও সংশয়ের জালে জড়িয়ে যান। ক্রমশ বিষয়বস্তুতে নিহিত সম্ভাবনা ও অন্তঃসার তাদের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। এইসব গবেষকদের মধ্যেও নিতান্ত দু-চারজন বিষয়ের সত্য থেকে জীবনের সত্যে পরিক্রমা করেন। গবেষণার আগে কিংবা পরে জীবনের অন্বিষ্ট বা অন্তঃসার নির্ণয়ে নির্বাচিত বিদ্যা প্রকল্পের কোনও প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না। এদিক দিয়ে ড. সাদিক উজ্জ্বল ও অনুকরণযোগ্য ব্যতিক্রম। তাই চাকরিসূত্রে প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি সিলেটি নাগরী লিপি ও সংসার বিবাগী ফকিরদের মরমি সাহিত্য সম্পর্কে গভীর অগ্রহ জাগিয়ে রাখতে পেরেছেন। বছরের পর বছর ধরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শহর ও গ্রামগঞ্জ ঘুরে সিলেটি নাগরী লিপির নমুনা এবং এই লিপিতে রচিত পাণ্ডুলিপি, মুদ্রিত পুস্তক ও এ সম্পর্কে লেখালেখি সংগ্রহ করেছেন ।... ডক্টর সাদিকের এই বই বহুবিধ সংকট-পীড়িত পাঠকের জন্য নিয়ে আসুক পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস। বর্তমানের প্রগলভ ঝরোখাকে সরিয়ে দিয়ে বিস্তার করুক যৌথ প্রত্নস্মৃতির নীলাঞ্জন ছায়া। বহুধাদীর্ণ জীবনে নির্যাসের গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করুক। আসুন, পাঠক, আমরা শরিক হই শিকড়-সংলগ্ন আলোর পুনরাবিষ্কারে আর নবায়মান দ্বিরালাপে। এই বইতে কোনো পূর্ণতার সংকেত বা সমাপ্তি-বিন্দু নেই; আছে শু নতুন আরম্ভের ঘোষণা ।
মােহাম্মদ সাদিকের জন্ম ১৯৫৫ সালে, সুনামগঞ্জের ধারারগাঁয়ে। আশির দশকের বিশিষ্ট এ কবির এযাবৎ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা আটটি। এছাড়া নাইজেরিয়ার খ্যাতিমান লেখক। চিনুয়া এচিবি-র উপন্যাস No Longer at Ease (১৯৬০)-এর বাংলা অনুবাদ “নেই আর নীলাকাশ” প্রকাশিত হয়েছে।