এই বইয়ে গ্রন্থিত প্রবন্ধগুলো রচিত হয়েছে বিভিন্ন প্যারাডাইমিক ভাষা-দর্শন, জীবন-দর্শন আর নন্দনতত্ত্বের অহংকেন্দ্রিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। সমকালীন ভাষাতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, সাহিত্যতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব এবং বিজ্ঞান-দর্শনের প্রকল্প ও অনুষঙ্গকে আশ্রয় করে কিছু প্রবন্ধে উপস্থাপিত হয়েছে মৌলিক চিন্তা উপাদান, যা মননশীল পাঠকের চিন্তা-চেতনাকেও স্পর্শ করতে পারে গ্রহণ কিংবা বর্জনের সৃষ্টিশীল ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে। সৃষ্টির স্বাধীন বিশ্বের যৌক্তির গাণিতিক বর্ণনা-বিশে?ষণ দেয়াই হল গ্রন্থিত প্রবন্ধগুলোর মূল উদ্দেশ্য, যদিও ভাষাভিত্তিক সব সত্যই আপেক্ষিকভাবে মিথ্যা প্রতিপাদনযোগ্য। সূচিপত্র : ভূমিকা ; সংজ্ঞান সংবেদ ; কাঠামোবাদী সাহিত্যতত্ত্ব ও ভাষাদর্শন ; হাইডেগার-এর সত্ত্বাবিজ্ঞান, ভাষাদর্শন ও নন্দনতত্ত্ব ; দেরিদার ডিকন্সট্রাকশন : তাত্ত্বিক বিচার ; আমেরিকান ডিকন্সট্রাকশন ; সস্যুর, দেরিদা ও প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ; সাহিত্য সমালোচনায় দেরিদার ডিকন্সট্রাকশনের প্রয়োগ ; মিশেল ফুকোঃ জ্ঞান ও চিন্তার প্রত্বতত্ত্ব ; কার্ল পপারের ‘বিশ্ব-৩’ ও ভাষাদর্শন ; ফ্রয়েড, লাকাঁ ও সমকালীন বিজ্ঞানদর্শন ; কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তাবাদ ও জীবনদর্শন ; সৃষ্টির কণা তরঙ্গ রূপ ও কোয়ান্টাম নন্দনতত্ত্ব; সমস্যা, সমস্যার সমাধান ও ভাষাদর্শন; সৃষ্টির স্বরূপ ও আপেক্ষিক মিথ্যার জগৎ; কবিতা ও প্যারাডাইম ; কবিতা ও গণিত ; প্রসঙ্গ কবিতা, কবি ও পাঠক ; কবিতা ও যুক্তির ভাষা ; মনের জানালা/বিশ্বচিত্র : সৃষ্টি/নির্মাণ ; বিষয় : আমি ও যৌগ-আমি ; বিষয় : ঘর, জানালা ও পথ ; জীবন ও মৃত্যু প্রসঙ্গে ; সৃষ্টির সিঁড়ি।
লেখক মঈন চৌধুরীর জন্ম বাংলা ১৩৫৪ সালের ২৫শে বৈশাখ। পেশাগতভাবে ভূ-প্রকৌশল উপদেষ্টা। কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ‘প্রান্ত’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তিনি।<নপ> বিজ্ঞান-দর্শন, সমাজ, প্রকৃতি, প্রেম, নিসর্গ, দ্রোহ ও সংঘাত এক নতুন আঙ্গিকে প্রাণ পায় মঈন চৌধুরীর প্রবন্ধ, কবিতা ও শিল্পকর্মের মর্মমূলে। জীবনের প্রয়োজনেই সৃষ্টির স্রষ্টা হতে চান এই প্রাবন্ধিক, কবি, শিল্পী বিভিন্ন মৌলিক চিন্তা ও চেতনাসহ।
মঈন চৌধুরী জন্ম ১৩৫৪ সালের ২৫ বৈশাখ, পার্কস্ট্রিট, কলকাতায়। মা জোহরা রহমান চৌধুরী, বাবা চৌধুরী শামসুর রহমান। কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করলেও জনাব মঈন পেশায় মূলত প্রকৌশল উপদেষ্টা। বর্তমানে অবসরে। কবিতা, প্রবন্ধ লেখেন আর ছবি আঁকেন। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা মোট সাত। ছবি এঁকেছেন প্রচুরসংখ্যক। প্রবন্ধ রচনায় নিষ্ঠা ও ঝোঁক তুলনামূলক বেশি। বিংশ শতাব্দীর দার্শনিকদের দর্শন বিশ্লেষণ করে লিখেছেন অধিকাংশ প্রবন্ধ। প্রকাশিত প্রবন্ধের বইয়ের সংখ্যা মোট নয়। এরমধ্যে সৃষ্টির সিঁড়ি, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭; ইহা শব্দ, ফেব্রুয়ারি ২০০৪; শব্দের সম্ভাবনা, ফেব্রুয়ারি ২০০৭: ভাষা, মনস্তত্ত্ব ও বাঙালি/বঙ্গাল সংস্কৃতি, জুলাই ২০০৯ অন্যতম। 'প্রান্ত' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছুকাল। তাঁর রয়েছে দেশি-বিদেশি সাহিত্য ও দর্শন পাঠের বিশাল জগৎ। রয়েছে বহু দেশ ভ্রমণ ও উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য-নিদর্শন পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষ করবার বিস্তৃত অভিজ্ঞতা। কবিতায় নিমগ্ন থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; বিনিময়ে বিশেষ সম্মান বা পুরস্কার গ্রহণের দিকটি বরাবরই এড়িয়ে চলেছেন; বিশেষ দলের চক্রে পড়ে নিজের নাম প্রচারের কাজেও জিম্মি হননি কখনও। ছবি এঁকে শুধু ক্ষান্ত হননি; বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর মূল চিত্রকর্ম এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বহু এন্টিক ও স্কাল্পচারের মূল কপি নিজ বাসায় সংগ্রহ করে রীতিমতো গ্যালারী তৈরি করেছেন। মঈন চৌধুরীর প্রবন্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য নৈর্ব্যক্তিকতা; বিশেষ মতাদর্শের প্রতি একতরফা ঝোঁক নয়; বরং কোনো বিষয়কেই বিনাপ্রশ্নে ছেড়ে না-দেয়া। ফুকো, দেরিদা, হাইডেগার, লাঁকা, ফ্রয়েড, পপার, সস্যুর, হিবটগেনেস্টাইনসহ বিশ্বের এমনসব দার্শনিকদের দর্শন নিয়ে মঈন চৌধুরী আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন, যাঁদের দর্শন সম্পর্কে বাংলাদেশে এবং ভারতে তাঁর আগে কেউ বাংলাভাষায় উল্লেখযোগ্যরূপে আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করেননি। এখনও পর্যন্ত উল্লিখিত দার্শনিকদের দর্শন নিয়ে বাংলাভাষায় বিশেষ বড় কোনো কাজ হয়েছে বলা যাবে না। এটি দর্শন বিষয়ক একটি প্রবন্ধ সংকলন। বইটির প্রবন্ধগুলোপ্রায় উপন্যাস পড়বার মতো গড়-গড় করে পড়ে ফেলা যায়। আশা করা যায় সাধারণ পাঠকসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ করে দর্শনের ছাত্র-শিক্ষকদের বেশ কাজে লাগবে বইটি।