"ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ " বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ’ প্রবােধচন্দ্র সেনের অন্যতম অবিস্মরণীয় কীর্তি। চারদশকেরওবেশি কাল পূর্বে এ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ঘটে । ‘বৈজ্ঞানিক বুদ্ধির সঙ্গে ‘রসজ্ঞানের অনন্য মেলবন্ধন দেখে বিদগ্ধ কবি-সমালােচক মােহিতলাল মজুমদারই শুধু মুগ্ধ হননি সেদিন, বস্তুত, সর্বস্তরের পাঠকমহলের স্বতঃস্ফুর্ত শ্রদ্ধা ও সমাদর আদায় করে নিয়েছিল প্রবােধচন্দ্রের এই অসামান্য আলােচনাগ্রন্থটি । এ-গ্রন্থের সুবাদেই—অনুমান। করা অসঙ্গত নয় যে—প্রবােধচন্দ্র পান রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ’-গ্রন্থ সম্পাদনার সম্মানসম্পৃক্ত দুরূহ দায়িত্বভার । সে দায়িত্ব যে কত নিপুণভাবে পালন করেছিলেন তিনি, এ তথ্য আজ আর কারও অজানা নয়। রবীন্দ্রনাথের একশাে পঁচিশ বছরের জন্মজয়ন্তীর উৎসবলগ্নে অক্লান্তকর্মা প্রবােধচন্দ্র অনুভব করেন যে, সারা জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দীর্ঘকাল দুষ্প্রাপ্য ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ' গ্রন্থটিকে নতুনভাবে প্রকাশ করা প্রয়ােজন । সেই আকাঙক্ষারই প্রতিফলন আদ্যন্ত সংস্কার-ঘটানাে ‘ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থের এই নতুন আনন্দ-মুদ্রণে। রবীন্দ্র-ছন্দের কলাকৌশল ও ছন্দ-বিষয়ে রবীন্দ্র-ভাবনা নিয়ে যুগােপযােগী আলােচনার ক্ষেত্রে এই নতুন সংস্করণটি, সন্দেহ নেই, প্রয়াত ছান্দসিকের শেষ অক্ষয় কীর্তিরূপে গণ্য হবে নামেই সংস্করণ। বস্তুত এ গ্রন্থটিকে প্রবােধচন্দ্র সম্পূর্ণ নতুন করে লিখেছেন বললে বেশি বলা হয় না । তিনভাবে পরিবর্তিত হয়েছে পুরনাে বইটি। পরিভাষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে এই দীর্ঘ সময়ে । নতুন পরিভাষার যথাযথ ব্যাখ্যা যােগ করেও সেইসব পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত করে প্রবােধচন্দ্র এ বইকে করে তুলেছেন সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও ঘটেছে বহু পরিমার্জন-পরিবর্ধন । তৃতীয় ও সর্বশেষ পরিবর্তন ঘটানাে হয়েছে বইয়ের বিন্যাসক্ৰমে । পরিচ্ছেদগুলির শিরনামা পূর্বে ছিল না। সেই অপূর্ণতাকে মােচন করা হয়েছে এবার । এই সূত্রেই কোনও পরিচ্ছেদ নতুন করে রচিত, কোনও-কোনও পরিচ্ছেদ পরিবর্ধিত। ছয়টি অধ্যায়ে ও তেতাল্লিশটি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত এ বই এখন রবীন্দ্র-ছন্দ-চিন্তা সম্পর্কে সামগ্রিক পরিচয় বহনকারী এক অনন্য সম্পদ।
জন্ম ২৭ এপ্রিল ১৮৯৭। পূর্ব বাংলার কুমিল্লা জিলায়। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। কর্মজীবনে খুলনা দৌলতপুর কলেজে ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক (১৯৩২-৪২)। পরে বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র অধ্যাপক ও রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ (১৯৪২-৬৫)। বাংলা ছন্দ বিষয়ে প্রবাসী পত্রিকায় (১৯২২-২৩) ধারাবাহিক প্রবন্ধ লিখে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই সূত্রেই রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যলাভ ও পরিণামে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার কর্মগ্রহণ। প্রায় সারাজীবনের (১৯২২-৮৬) গবেষণার ফলে তাঁর রচিত শতাধিক ছন্দ প্রবন্ধ এবং আধুনিক বাংলা ছন্দসাহিত্য’, ‘নূতন ছন্দ পরিক্রমা’ প্রভৃতি বহু গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের একটা বড় অভাব পূরণ করেছে। ফলে ছন্দশাস্ত্রের নির্মাতা বলেই তার সর্বাধিক খ্যাতি। তা ছাড়া তিনি রবীন্দ্র সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতি নানা বিষয়ে বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর ‘ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত’ বইটি রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন’ গান সম্বন্ধে বহুব্যাপ্ত ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়েছে। আর ভারতাত্মা কবি কালিদাস' বইটি পেয়েছে পশ্চিমবাংলার বঙ্কিম পুরস্কার । মৃত্যু : ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬