”রবিজীবনী- ১ম খণ্ড (১২৬৮-১২৮৪)” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: রবিজীবনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে। প্রকাশমাত্রই এই জীবনীগ্রন্থ রবীন্দ্রানুরাগী মহলে তােলে বিপুল আলােড়ন। সূচনা করে বিস্তর তর্ক-বিতর্কের । এই আলােড়ন মুখ্যত দুটি কারণে। প্রথম কারণ এই যে, সুপরিচিত ও সুবিস্তৃত একটি ‘রবীন্দ্রজীবনী’ থাকা সত্ত্বেও, আর-একটি জীবনী গ্রন্থ লেখা হল কেন, কোন দিক থেকে এর প্রয়ােজনীয়তা, অনেকেই তা চট করে বুঝতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণটি আরও গুরুতর। প্রশান্তকুমার পাল তাঁর এই ‘রবিজীবনী’তে ‘জীবনস্মৃতি’ কিংবা ‘ছেলেবেলায় ছড়িয়ে-থাকা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ-প্রদত্ত বিভিন্ন তথ্যের যেভাবে বিরােধিতা করেছেন, তা অনেকেরই কাছে মনে হয়েছিল খােদার উপর খােদকারির মতাে আপত্তিকর। অথচ এই অভিযােগ ও আপত্তির মধ্যেই নিহিত নতুন এই জীবনীগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়ােজনীয়তা। রবীন্দ্রজীবনী’র গুরুত্ব স্বীকার করেও বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন : “একজন অমৃতপুত্রকে আমরা তখনই আবার সহজভাবে তাঁর মর্ত্য-রূপে ভাবতে পারি, যখন সময়ের ব্যবধানে অনেক অবান্তর সঞ্চয় ঝরে পড়ে, আবার সমস্ত তথ্য প্রকাশিত হবারও বাধা থাকে না । রবীন্দ্রনাথকে তাই অপেক্ষা করতে হবে হয়তাে দীর্ঘকাল— অন্তত যতদিন-না ‘রবীন্দ্রজীবনী’ পরিবর্ধিত হবার পরেও নতুনতর তথ্য নিয়ে অনুরূপ গ্রন্থ আরও বেরােয়। বস্তুত, সেই অপেক্ষারই যােগ্য অবসান ঘটিয়েছেন প্রশান্তকুমার পাল তাঁর ‘রবিজীবনী' গ্রন্থে। প্রখর অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তিনি রবীন্দ্রজীবন সম্পর্কে পূর্ব-প্রচারিত প্রত্যেকটি তথ্য বিচার করে দেখেছেন, কোনও সংস্কারের বশবর্তী হননি। তথ্য-বিচার ও নতুনতর তথ্যের প্রয়ােগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন এমন বহু মৌলিক উপাদান, যেগুলি এর। আগে কেউ ব্যবহারের কথা কল্পনা পর্যন্ত করেননি। ফলে, রবীন্দ্রনাথের বাল্য ও কৈশােরের পূর্ণ চিত্রটি এখানে নিঃসংশয়-রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। ভাবী মহাকবির বিকাশের সূত্রটিও পাঠকের হাতে নিপুণভাবে ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম খণ্ডের এই আনন্দ-সংস্করণে বিভিন্ন বিতর্ক ও পরবর্তী গবেষণার আলােয় সমস্ত তথ্য পুনর্বিবেচনা করেছেন প্রশান্তকুমার পাল। ফলে সংশােধন ও সংযােজনের মধ্য দিয়ে গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে পূর্ণতর ।
Proshantokumar Paul-এর জন্ম ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৫ (১৮ মে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ)। কলকাতায়। শৈশব কেটেছিল কৃষ্ণনগরে, প্রাথমিক পড়াশোনা এ. ভি. স্কুলে। কৈশোর ও যৌবন কলকাতারই স্কুলে-কলেজে। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় অনার্স নিয়ে বি-এ পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এম-এ পাশ করেছেন ১৯৬০ সালে। ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা শুরু করেন কলকাতার আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা করতে করতেই রবীন্দ্রজীবনের বিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্ররচনা পড়তে গিয়ে অনুভব করেন যে, রবীন্দ্রজীবনীর এক বিশাল অংশ তমসাবৃত অবস্থায় রয়েছে। উৎসাহী হয়ে শুরু করেন। গবেষণা, অবশ্য ডিগ্রি-প্রত্যাশার বাইরে দাঁড়িয়ে। ১৯৭২ থেকে সেই নবতর গবেষণার সূচনা। ১৯৮২-তে ‘রবিজীবনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। প্রকাশমাত্রই এ-গ্রন্থ সর্বস্তরে তোলে আলোড়ন। ১৯৮৪-তে বেরোয় দ্বিতীয় খণ্ড। একইভাবে সমাদৃত হয় এই নতুন খণ্ডও। ১৯৮৫ সালে ‘রবিজীবনী’র জন্য দুটি বিশিষ্ট পুরস্কার পান। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ও সুরেশচন্দ্র-স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার। বিশ্বভারতীতে আনন্দবাজার পত্রিকা সংস্থা প্রবর্তিত অশোককুমার সরকার স্মৃতিবৃত্তির প্রথম প্রাপকরূপে ১৯৮৫ সাল থেকে তিন বৎসর শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনে গবেষণা করে প্রশান্তকুমার ১৯৯৩-এর। শেষ থেকে সেখানকার অধ্যাপক পদে কাজ করেছেন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটুট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে সম্মানিত করেছেন। ২০০১-এ পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার রবিজীবনী সপ্তম খণ্ডের জন্য।