"পাক-প্রণালী" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: রন্ধন-প্রকরণ-সংবলিত এক গ্রন্থ রূপে দেখলে বস্তুত এ-গ্রন্থের মহিমাকে খর্ব করে দেখা হয়। এ-কথা ভুললে চলবে না যে, ‘পাকপ্রণালী’র পূর্বে বাঙলা ভাষায় রন্ধনবিদ্যা সম্পর্কে কোনও উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ রচিত হয়নি। সেদিক থেকে বিপ্রদাস পথিকৃৎ। খাদ্যকে জীবনধারণের মূল ভিত্তিরূপে গণ্য করে স্বাস্থ্যসম্মত রন্ধনপ্রণালীর যাবতীয় কলাকৌশল তিনিই প্রথম গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। মাছ-মাংস- ডিম, তরিতরকারি-ফলমূল ও মসলাপাতির গুণাগুণ বর্ণনা, রুচিভেদে, কালভেদে ও শারীরিক অবস্থাভেদে আহার্যের ব্যবস্থা নির্ধারণ,, আদর্শ রন্ধনশালার পরিচয়, সমগােত্রীয় রান্নার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্যনির্দেশ—এ-জাতীয় বহু আনুষঙ্গিক আলােচনা ‘পাকপ্রণালী’কে বিশিষ্টতা দিয়েছে, করে তুলেছে বাঙালীর রান্নার গ্রন্থ। বাঙলা হেসেলের এমন কোনও রান্না মনে পড়ে না, যার প্রস্তুতপ্রণালী এ-গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি । আবার, যে-সব বিদেশী রান্না সে-যুগেও বাঙালী রসনাকে লােলুপ করে তুলত, সে-সব রান্নাও শেখাতে ভােলেননি তিনি। ষােলটি সুপরিকল্পিত অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই গ্রন্থে বিপ্রদাস রান্নার এক অনন্য যােড়শােপচারই যেন নতুনভাবে তুলে ধরেছেন। ভাত-ডাল- শুক্তো- ডালনাহেঁচকি- চচ্চড়ি- দম-কালিয়া- ঘণ্ট- ধােকাঝােল-ঝাল- অম্বল- চাটনি ইত্যাদি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পােলাও-খিচুড়িবিরিয়ানি কিংবা চপ-কাটলেট- কাবাবকোপ্তা- কোর্মার রকমারি । আবার কাস্টার্ডপুডিং, আচার-জেলি, মণ্ড-মােরব্বা, জুস-স্টু, ফুট-সুপ, বিষ্ণুভােগমােহনভােগও বাদ যায়নি। এমন অনেক খাবার শিখিয়েছেন বিপ্রদাস যার নামই চমকপ্রদ শুধু নয়, স্বাদও যথার্থ বৈচিত্র্যপূর্ণ। হিন্দু- অহিন্দু, আমিষভােজী- নিরামিষাশী, নিম্নবিত্ত গৃহস্থ বা সচ্ছল ভােজনবিলাসী—এ বইতে প্রত্যেকেই তাঁর উপযােগী রান্নার হদিশ পাবেন ।