অরুন্ধতী রায়ের দ্য গড অব স্মল থিংস উপন্যাসের সব ঘটনা ঘটেছে সোফি মল আইমেনেমে আসার পর। এটা সত্যি যে এক দিনেই সবকিছু বদলে যেতে পারে। সামান্য ঘটনা ও সাধারণ জিনিসগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং আবার গড়ে ওঠে। তারা নতুন অর্থ নিয়ে হাজির হয়। হঠাৎ করে একটি গল্পের ধেঁায়া পরিণত হয় অস্থিতে। এদিক থেকে ভাবলে সোফি মল আইমেনেমে আসার পরই সবকিছু শুরু হয়েছিল ভাবলে বিষয়টিকে কেবল একটি দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হবে।
বলা যায়, এটি আসলে শুরু হয়েছিল হাজার হাজার বছর আগে। মাক্সীর্য়রা আসার অনেক আগে। ব্রিটিশরা মালাবার দখল করে নেওয়ার আগে। ডাচ সাম্রাজ্যের উত্থান ও ভাসকো দা গামা আসার আগে। জামোরিনের কালিকট বিজয়ে এবং একটি নৌকায় করে খ্রিষ্টধর্ম এসে চায়ের ব্যাগের চায়ের মতো কেরালায় চুইয়ে পড়ার আগে। যখন ভালোবাসার আইনগুলো প্রণীত হয়েছিল, আসলে এর শুরু তখন। আইনে বলা হয়েছিল কাকে ভালোবাসা যাবে ও কীভাবে। এবং কতটুকু।
কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এ হতাশা ভরা পৃথিবীতে সেদিন ছিল ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরের আকাশ—নীল রঙের একটি দিন। আকাশ—নীল রঙের একটি প্লিমাউথ তার পুচ্ছপাখনায় সূর্যের আলো মেখে সবুজ ধানখেত ও পুরোনো রাবারগাছগুলো পেরিয়ে কোচিনের দিকে ছুটে চলছিল ...
বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক, রাজনৈতিক লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও মাঠপর্যায়ের অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ের আলাপচারিতার সংকলন দানবের রূপরেখা। আলাপচারিতার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-২০০১-২০০৮। এর মধ্যে নির্ণীত হয়েছে বিশ্বব্যবস্থার নতুন রূপ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ প্রত্যেকেই প্রভাবিত হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা, আফগানিস্তান দখল, ইরাক যুদ্ধের সূচনার পাশাপাশি করপোরেট বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে খ্যাত ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, কৃষি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার হারানো, অহিংস আন্দোলনের কার্যকারিতা হারিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিস্তারও এ সময়ের ঘটনা। এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই কথা বলেছেন অরুন্ধতী রায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্ণবাদ ও ভারতে হিন্দু ফ্যাসিজমের পুনরুত্থান, পৃথিবীর অপরাপর দেশজুড়ে দুঃশাসন ও কর্র্তৃত্বপরায়ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, সাধারণ মানুষের অধিকার হ্রাস, নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি-বর্তমান বিশ্বের এই প্রবণতাগুলোও উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। তাঁর সাহস, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা আপনাকে ক্ষুব্ধ, উদ্বুদ্ধ আর আগ্রহী করে তুলবে।