দক্ষিণারঞ্জন তাঁর গোটা জীবন মূলত শিশুসাহিত্য সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত করেন। ঠাকুরমার ঝুলির পাশাপাশি তিনি ছোটোদের জন্য লিখেছেন দাদামশায়ের থলে, ফার্স্ট বয়, লাস্ট বয়, সবুজ লেখা, বাংলার সোনার ছেলে, চিরদিনের রূপকথা, ক্যাঙ্গারু, উৎপল ও রবি, চারু ও হারু, খোকা-খুকুর খেলা, আশীর্বাদ ও আশীর্বাণী, কিশোরদের মন, আমার দেশ ইত্যাদি। শুধু ছোটোদের জন্য গল্প, কবিতাই নয়, দক্ষিণারঞ্জন তাদের জন্য অনেক শিক্ষামূলক বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধও রচনা করেছেন। সবুজ লেখার মধ্যে এরকম অনেকগুলো নিদর্শন পাওয়া যায়। বিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা হলেও তা খুবই সহজ এবং সুখপাঠ্য ভাষায় রচনা করা হয়েছে। সেইসব লেখায় শিক্ষার গাম্ভীর্যের লেশমাত্র নেই, আছে গল্প বলার ঢঙে সহজ করে ছোটোদের বুঝিয়ে দেওয়ার কৌশল। ছোটোদের জন্য লেখার পাশাপাশি তিনি অসংখ্য দেশাত্মবোধক গান এবং কবিতা রচনা করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘আমার দেশ’, যাতে পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরারোপ করেন। এছাড়াও দক্ষিণারঞ্জনের অন্যান্য লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঠাকুরদাদার ঝুলি, আর্য নারী, ঠানদিদির থলে ইত্যাদি।
এতগুলো বছর পার করে এসেও দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার এবং তাঁর ঠাকুরমার ঝুলি জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক। তবে সেই তুলনায় তাঁর অন্যান্য লেখাগুলো অনেকটাই অবহেলিত। এ ছাড়াও তাঁর প্রচুর লেখা অগ্রন্থিত থেকে গেছে এবং অনেক বই এখন আর পাওয়াও যায় না। এখন যদি সুরসিক পাঠক এবং দায়িত্ববান সাহিত্যপ্রেমীরা এগিয়ে এসে দক্ষিণারঞ্জনের সমস্ত কাজ একত্র করে নতুন যুগের পাঠকের কাছে তুলে ধরেন, সেই কাজই হবে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
এ বছর বাংলাপ্রকাশ ঠাকুরমার ঝুলি প্রকাশ করল। কালের বিবর্তনে ভাষারও বিবর্তন হয়, মানুষের চালচলন, আচার-ব্যবহারেরও পাল্টে যায়। মানুষের মৌখিক ও লৈখিক ভাষার পরিবর্তনের বা বিবর্তনে ফলে এবার আমরা চেষ্টা করেছি বইটিকে চলতি ভাষায় রূপান্তর করতে। এতে বর্তমান প্রজন্মের বেশ উপকার হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
Dakshinaranjan Mitra Majumder (১৮৭৭ বাংলা ১২৮৪ বঙ্গাব্দ - ১৯৫৬ বাংলা ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ) প্রখ্যাত বাংলা ভাষার রূপকথার রচয়িতা এবং সংগ্রাহক। তার সংগ্রহিত জনপ্রিয় রূপকথার সংকলনটি চারটি খন্ডে প্রকাশিত যথা ঠাকুরমার ঝুলি,ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদিদির থলে ,এবং দাদামাশয়ের থলে । দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বাংলা ১২৮৪ সালের (১৮৭৭ ইং) ২ রা বৈশাখে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় উলাইল এলাকার কর্ণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম কুসুমময়ী ও পিতার নাম রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার। দক্ষিণারঞ্জনের বাবা রমদারঞ্জন ১৯০২ সালে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিসিমা রাজলক্ষ্মীর কাছে টাঙ্গাইল বসবাস শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলা ১৩৬৩ সালের (১৯৫৬ ইং) ১৬ই চৈত্র কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।