"ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সেএক অবিশ্বাস্য কাল। বিশাল ভারত তখন ইংরেজের করতলগত। আরও স্পষ্ট করে বললে বিদেশি প্রভুদের পদানত। তারই মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ এখানে-ওখানে গদিয়ান শ্বেতাঙ্গ-রাজা। সে রাজত্বে তাঁরাই সর্বেসর্বা। তাঁরা নিজেরাই তৈরি করেন নিজেদের টাকা। শুধু রাজা’নয়, অনেক শ্বেতাঙ্গ সেদিন আচারে-ব্যবহারে বিলাসব্যসনে আমাদের নবাবদের মতাে তাঁরা শ্বেতাঙ্গ নবাব’। তাঁরা হারেম পােষেন। ভারতীয় বাইজিরা অনেকে তাঁদের আপ্যায়নের জন্যই বুঝিবা—“রাজ’নর্তকী। তাঁদের প্রিয় খাদ্য ভারতীয় কারি’। সেই মেলামেশার দিনগুলােতে রাজা-প্রজা, সাদা-কালাে ভেদাভেদ যেন লুপ্ত। ফলে ভারতীয় বহুবর্ণ সংসারে যুক্ত হল নতুন এক সম্প্রদায়—অ্যাঙ্গলাে ইন্ডিয়ান। শুধু তা-ই নয়, প্রবাসী ইংরেজ নারী স্বদেশের বিখ্যাত লেখকের কাছে যদি ‘পীত-ব্রাহ্মণী’, তবে প্রেম-পাগল শ্বেতাঙ্গ নিজেও নিজের কথায় ‘শ্বেত-ব্রাহ্মণ’। আর এক সুদর্শনা তরুণী নিজেই সেদিন ভারতের প্রেমে পাগলিনী। ‘কামদেবের এই আপন উদ্যানে তাঁকে কবিতে পরিণত করেছে। তিনি যেন স্বয়ং রতি বিদেশির সংসর্গে এদিকে ভারতের মনােরাজ্যও তােলপাড়। ইংরেজি শিক্ষা। স্টিম ইঞ্জিন৷ কলের জাহাজ। কলের গাড়ি। টরে টক্কা-টেলিগ্রাফ। নতুন আয়ুধ কুইনিন। এই নতুন দুনিয়ার নতুন নেশা, নতুন পেশা সাহেব-ধরা, কতভাবেই না আমাদের পূর্বপুরুষরা সেদিন ভজনা করেছেন সাহেবদের। ইংরেজি শিক্ষাই শেষ কথা নয়, কোনও কোনও মহলে চালু হয়ে গেল ইংরেজি পােশাক, ইংরেজি কেতা। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন সাহেব হবার। ‘এবার মলে সাহেব হব’, রামপ্রসাদী সুরে তাঁদের গান। সবই আজ ইতিহাস। সবই ঐতিহাসিক ঘটনা, কোনও কাহিনীই নয়, মনগড়া। তবু অনৈতিহাসিক। কেননা, ইতিহাসের মূল ধারার বাইরে, এ-সব ঘটনা প্রায়শ নজর এড়িয়ে গিয়েছে। রাজ-ঐতিহাসিকদের। ইতিহাসের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা সেই সব ঘটনা কুড়িয়ে এনেই শ্রীপান্থের এই বিচিত্র বর্ণাঢ্য ঐতিহাসিক উপাখ্যান। তিনি প্রমাণ করেছেন, পাদটীকাও অবহেলাযােগ্য নয়, এমনকী কখনও কখনও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ও অনুসন্ধানযােগ্য।