আমাদের দেশে হাদীসের চর্চা সাম্প্রতিক মাত্র কয়েক শ' বছরের। এটাও গুটিকয় উলামায়ে কেরামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা অত্যধিক গুরুত্ব লাভ করেছে। ইসলামের মর্মবাণী জনগণের মনের দ্বার প্রান্তে পৌছিয়ে দেবার জন্য বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব এগিয়ে এসেছেন। উলামায়ে হকেরাম বাংলা ভাষাকে গুরুতু দিয়েছেন। হাদীসের চর্চা উলামায়ে কেরামের মজলিসে আবদ্ধ না থেকে জনগণের মধ্যেও স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে হাদীস গ্রন্থগুলাে অনূদিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। হাদীস গ্রন্থগুলাের মধ্যে বুখারীর গুরুত্ব আমাদের দেশে সমস্ত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ভাতের মতাে। এটিই কেন্দ্রীয় ও প্রধান হাদীস গ্রন্থ। তাই এদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গােষ্ঠীর নজর পড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে বুখারীর অনুবাদ হচ্ছে। একদিক দিয়ে এর গুরুত্ব ও প্রয়ােজন অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন রুচির পাঠক বিভিন্ন অনুবাদে মনােসংযােগ করতে পারবেন। তাছাড়া এর ফলে হাদীসের চর্চা ব্যাপকতর হবে। তবে অনুবাদ ও উপস্থাপনা যাতে ত্রুটিপূর্ণ না হয় এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পাঠক সমাজকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। হাদীস অনুবাদের ক্ষেত্রে ক্রটি একটি অমার্জনীয় অপরাধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এ ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় . বলেছেন । من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار - “যে ব্যক্তি জেনেবুঝে আমার সম্পর্কে মিথ্যা বললাে সে যেন জাহান্নামে তার আবাস ঠিক করে নেয়।
মুহাদ্দিস শব্দের আভিধানিক অর্থ হাদিসবেত্তা। বলা হয়ে থাকে সকল মুহাদ্দিসের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। ১৯৪ হিজরী, ১৩ই শাওয়াল শুক্রবার খোরসানের বোখারাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (র) এর বই সমূহ এর জন্যই তিনি স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মুসলিম জগতে ইমাম বোখারী নামে অধিক পরিচিত তিনি। তাঁর পিতা ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম মুসলিম জগতের আরেক পরিচিত ব্যক্তিত্ব, যার ওঠা-বসা ছিলো হাদিসবীদ আল্লামা হাম্মাদ (রহঃ) এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর। অঢেল ধন-সম্পত্তির মালিকও ছিলেন তিনি। তাই খুবই অল্প বয়সে ইমাম বোখারী পিতাহারা হলেও কোনো সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এর আরেক কারণ তাঁর মা। তাঁর মা ছিলেন এক বিদূষী ও পরহেজগার নারী। পুত্রকে তিনি সঠিক শিক্ষাটাই দিয়েছিলেন। তাই মাত্র ৬ বছর বয়সে বোখারী (রঃ) কোরআনের হাফিজ হন এবং এরপর হাদিস শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ষোল বছর বয়সে হজ্জে গমন করে মক্কায় থেকে যান দক্ষ হাদিসবীদদের থেকে হাদিসের জ্ঞান নিতে। হাদিস সংগ্রহের আশায় ইরাক, সিরিয়া, মিশর, মদিনাসহ বহু অঞ্চলে ভ্রমণের পর ষোল বছর পর আবার বোখারায় ফেরত যান। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন দানশীল। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিলো প্রখর। ফলে হাদিস শুনেই মনে রাখতে পারতেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছয় লক্ষ হাদিস মুখস্থ বলতে পারতেন, ক্ষুদ্র ত্রুটিও তার নজর এড়াতো না। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (র) এর বই সমগ্র বলতে আমরা বুঝি বুখারী শরীফ, যাতে স্থান পেয়েছে ইমাম বোখারী (রঃ) দ্বারা সংগ্রহকৃত সহীহ হাদিস। তার সংকলিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। শেষ বয়সে তিনি নিজ বাসভূম থেকে বিতাড়িত হন এবং সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে আসেন। এ অঞ্চলেই তিনি ২৫৬ হিজরীর, ১লা শাওয়াল ইন্তেকাল করেন।