জাকারিয়া মুহম্মদ ওরফে জ্যাক মুহম্মদের অভ্যেস অফিসে এসে নিজের চেয়ারে বসা, এক গ্লাস পানি চাওয়া, পানিটা খাওয়ার আগে কিংবা পরে অথবা ইনবিটুইন জিজ্ঞেস করা, কেউ টেলিফোন করছিলো? করছিলো মানে করেছিলো? জ্যাকদের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তবে ঢাকায় বড় হয়েছে। টান দিয়ে এবং না দিয়ে বাংলা বলতে পারে। খাচ্ছি, যাচ্ছি, খিতা করতামরে, আইতাছি ইত্যাদি সবরকম পারে। সে বেশ উদ্যমী যুবক। বয়স উনত্রিশের কাছাকাছি। ফর্সা রং, একটু নধর গোলগাল শরীর, বেশ মজবুত। তবে লম্বা না তেমন, হিলটিল পরে মাত্র পাঁচ-ছয়। মাঝে মধ্যে খুব মন খারাপ করে ফেলে এজন্যে। তার ছোট ভাই খসরু শুধু লম্বা ছিপছিপে দেহ ও লাবণ্যমাখা চেহারার কারণে অনেকের মনোযোগ পেয়ে যায়। সে ততোটা পায় না। খুব মন খারাপ হয়ে যায় কখনো কখনো। অবশ্য গড়পড়তা সে যথেষ্টই আকর্ষণীয় যুবক-বিশেষত মধ্যবিত্ত বাঙালী ঘরের পাত্র হিসেবে। ফর্সা রং, বেতন চার অঙ্কের ঘরে, স্বাস্থ্যবান-খারাপটা কি। কিছু কিছু ঠিকই পারে না জ্যাক। আবার অনেক কিছু পারে। সে যেমন কৌতূহলী, তেমনি আবার সাবধানী। কোনো শালা বলতে পারবে না, সে আওয়ামী লীগ করে না বিএনপি করে। চৌধুরী হাউস অব বিজনেসে সে জয়েন করেছে বছর চার আগে। ব্যাংকিংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে বলে বসদের কাছে তার বেশ কদর।
রাহাত খানের জন্ম কিশােরগঞ্জ জেলার চারশাে বছরের পুরােনাে এক পরিবারে, ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর। সপ্তম শ্রেণী থেকে ময়মনসিংহ শহরে থাকা শুরু। অর্থনীতি ও দর্শন নিয়ে বি.এ. পাশ ঐ শহরের আনন্দমােহন কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে এম.এ. পাশ করে প্রায় আট বছর ঢাকার জগন্নাথ কলেজসহ বেশ ক’টি কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে সাংবাদিকতার পেশায় ঢুকে যাওয়ার শুরু থেকে ইত্তেফাকেই, ১৯৯৬ সাল থেকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। প্রায় ৪০ বছরের দীর্ঘ সাহিত্য জীবন। গল্প লেখা দিয়ে শুরু। পরে উপন্যাসে হাত দেওয়া। লেখায় বাহুল্য শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করেন না। মানুষ এবং মানুষের জীবনকে ঘিরেই যা কিছু তার সাধনা। প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। লেখকের জীবন যাপন করেছেন বরাবর, নিজেও বােধকরি তাঁর গল্পউপন্যাসের চরিত্রের মতাে একটু বেহিসেবী, একটু বেপরােয়া তবে করে-ছাড়ার মতাে একটি চরিত্র। হৃদয়ের মাপটা বরাবরই বড়। মানুষের ও নিজের প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়ার ছাপ আছে রাহাত খানের গল্প-উপন্যাসে। একটি নিজস্ব ভাষা-শৈলীর অধিকারী তিনি। সাহসী ও শক্তিমান, জীবনকে ছুঁয়েছেন, দেখার ও শেখার পরিচয় দিচ্ছেন বারবার।