"ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: অবশেষে গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন আইজাক আসিমভ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সিরিজ ফাউণ্ডেশন-এর সমাপ্তি টানলেন । ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন তার অসামান্য কীর্তি। মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন পূর্বে আসিমভ এটি লিখে শেষ করেন। স হ্যারি সেলডন অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন সাইকোহিস্টোরি-- তার গ্রান্তকারী থিওরি কার্যকরী করে তােলার জন্য, মহাবিশ্বে মানবজাতির নিরাপদ এক ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার জন্য। কিন্তু সুবিশাল এবং অবিনশ্বর গ্যালাকটিক এম্পায়ার ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে- সেলডন এবং তার প্রিয় সব মানুষকে নিয়ে শুরু হয়েছে ক্ষমতালােভী মানুষগুলাের দাবা-খেলা। সেলডনকে যে নিজের মুঠোয় নিতে পারবে সে-ই নিয়ন্ত্রণ করবে মহাবিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার- সাইকোহিস্টোরি । স্বার্থান্বেষী এক রাজনীতিবিদ, দুর্বলচিত্তের সম্রাট প্রথম ক্লীয়ন, নির্দয় এক মিলিটারি জেনারেল সবাই চায় সাইকোহিস্টোরি। এদের কাছ থেকে যেভাবেই হােক সেলডনকে তার সারাজীবনের সাধনার ফসল লুকিয়ে রাখতে হবে, মানবজাতির প্রতি এটাই হবে তার শেষ অবদান । সত্যিকারের উত্তরাধিকারীর অনুসন্ধান করতে লাগলেন তিনি। যে অনুসন্ধানের সূচনা হয় নিজের দৌহিত্রীর মাধ্যমে নতুন এক ফাউণ্ডেশন গড়ে তােলার পরিকল্পনার মাধ্যমে।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।