"পল্লী উন্নয়ন" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আমাদের আজকের বাংলাদেশের যে পরিচয় তা আবহমানকালের অজস্র গুচ্ছগ্রামের নিটোল সমন্বয়েই এক চিরায়ত বাংলাদেশ। আর এই চিরায়ত নিয়মেই বাংলাদেশের পল্লীগুচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা পাল্টেছে বারবার। কখনাে থেমে-থেমে, কখনােবা আন্তঃ/বহিঃ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে প্রবল স্রোতােধারায়। বইটিতে তারই অভিজ্ঞতা ও স্বচ্ছ অন্তদৃষ্টির সমন্বয়ে আলােকিত করার প্রয়াস দেখিয়েছেন বিশিষ্ট লেখক হাসনাত আবদুল হাই। দেখিয়েছেন কি করে পাল্টে গেছে বাঙালীর জীবনপ্রণালী ও তার লৌকিক আলেখ্য। এই পাল্টে যাওয়া জীবনের অনুসন্ধান এবং গ্রাম-বাংলার রূপান্তরের অগ্রগতির তথ্য-তত্ত্ব ও সংগঠনগত রূপরেখা নিয়েই পল্লী উন্নয়ন। প্রকৃতপ্রস্তাবে বইটিতে অনুসন্ধান করা হয়েছে সভ্যতার ধারানুক্রমে পল্লীর সূচনা, বিকাশ ও অগ্রগতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এতে রয়েছে তথ্য ও তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখা দেয়ার একটা নির্মোহ অথচ ক্রিয়াশীল চেষ্টা। দেখানাে হয়েছে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পল্লীর ভূমিকা, অবস্থান ও রূপান্তরের কালক্ৰম। উদাহরণ হিসেবে এসেছে দেশ ও কাল। স্বল্প সময়েই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণও নিঃশ্বেষিত হয়ে যাওয়ায় মনে হয় বইটির চাহিদা ও গুরুত্ব এখনাে পাঠকের কাছে যথেষ্ট রয়েছে।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।