উনিশ শতকের সপ্তম দশকের দিকে বাংলা সাহিত্যের পরিণত যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২) সাহিত্যের আসরে প্রবেশ করেন। তাঁর জন্ম কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর 'গ্রামবার্তা' সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার ওরফে 'কাঙাল হরিনাথ' তাঁর সাহিত্যগুরু ছিলেন। হরিনাথ মজুমদারের 'গ্রামবার্তা' এবং ঈশ্বর গুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' নামক পত্রিকা দুটিতেই মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। তাঁর বহু রচনার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাসজাতীয় গ্রন্থ 'বিষাদ-সিন্ধু'। মুসলিম রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূচনালগ্ন থেকেই সমন্বয়ধর্মী ও স্বাতন্ত্র্যধর্মী দুটি ধারা দেখা যায়। দ্বিতীয় ধারার সূচনা হয়েছিল 'সুধাকর' দলের হাতে। কিন্তু এর বহু আগেই মীর মশাররফ হোসেন সমন্বয়ধর্মী ধারার সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বহু মুসলিম সাহিত্যিক তাঁর প্রবর্তিত সাহিত্যধারা অনুসরণ করে বাংলা সাহিত্যে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'রত্নবতী' প্রকাশিত হয়। এ সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় মীর মশাররফ হোসেনের গদ্যরচনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।