"মুসলিম শরীফ -৬ষ্ঠ খণ্ড" বইটির মহাপরিচালকের কথা অংশ থেকে নেয়াঃ সিহাহ সিত্তাহ তথা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস সংকলনের মধ্যে বুখারী শরীফের পরেই মুসলিম শরীফের স্থান। ১ এশিয়ার খােরাসানের বিশ্ববিখ্যাত হাফেযুল হাদীস হযরত আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ নিশাপুরী (র) এই সংকলনটি প্রণয়ন করেন। তিনি মক্কা-মদীনা, সিরিয়া, ইরাক, মিসর প্রভৃতি দেশে ব্যাপক সফর করে সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে পবিত্র হাদীস সংগ্রহ করেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র) তাঁর অন্যতম ওস্তাদ ছিলেন এবং ইমাম তিরমিযী (র) তাঁর অন্যতম ছাত্র ছিলেন। তিনি তাঁর সংগৃহীত ৩ লক্ষ হাদীসের মধ্য থেকে নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রায় চার হাজার হাদীস (পুনরাবৃত্তি বাদে) তার সইহি' সংকলনে লিপিবদ্ধ করেন। এ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শরীয়তের প্রামাণ্য উৎস এ সকল হাদীস সংগ্রহ এবং পরিশুদ্ধতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়ার পর এগুলাে বিভিন্ন অধ্যায় ও পরিচ্ছেদে বিষয়ানুক্রমিকভাবে বিন্যাস করা ছিল এক কঠিন শ্রম ও মেধাসাধ্য কাজ। কিন্তু মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সুদীর্ঘ অধ্যবসায় ও অসাধারণ প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তিনি যে সংকলনটি উপহার দেন, ইসলামী শরীয়তের প্রয়ােজনীয় প্রায় প্রতিটি বিষয়ের উল্লেখযােগ্য হাদীসগুলাে এখানে স্থান পেয়েছে। বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা ও হাদীসের তত্ত্বগত দিক বিবেচনা করে তিনি একটি বিশেষ ধারায় তা বিন্যাস করেন, যা হাদীসবেত্তাদের বিচক্ষণ পর্যালােচনায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করে। এ মূল্যবান গ্রন্থটি প্রতিটি যুগেই ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অবিস্মরণীয় উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অনাগত দিনেও এর প্রয়ােজন ফুরাবে না। বস্তুত ইসলামী শরীয়তের মৌলিক দুটি উৎস—পবিত্র কুরআন ও হাদীসের মধ্যে এই সংকলনটি এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে পঠিত এই গ্রন্থটি বাংলাদেশেও মাদ্রাসার উচ্চ শ্রেণীগুলােতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে পাঠ্য তালিকাভুক্ত হওয়ায় কেবল বিশেষ শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেই এর অধ্যয়ন সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ শিক্ষিত সর্বস্তরের পাঠকদের জন্য বােধগম্য করার লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের প্রথিতযশা আলিমদেরকে দিয়ে এর বাংলা অনুবাদ করিয়ে ১৯৯৪ সালে ষষ্ঠ খণ্ড প্রকাশ করে। অল্পকালের মধ্যেই এর তিনটি সংস্করণের মুদ্রিত কপিগুলাে ফুরিয়ে যায়। পাঠক মহলের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করে আমরা এবার এর চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশ করলাম।