"পঞ্চাশটি গল্প" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: প্রায় অর্ধশতকের কাছাকাছি সময়বৃত্তে রচিত অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের সংখ্যা এক কথায় অজস্র। অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্যপত্রিকা থেকে শুরু করে অনামী অণুপত্রিকায় সরষের মতাে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেইসব গল্প। তাদের অনেকের নাম লেখক নিজেই ভুলে গেছেন। অবিরত রচনার অনেকটাই হারিয়ে গেছে এই মুহূর্তে। তবু অন্তত প্রায় দুশাে গল্প এখনও কিংবদন্তির মতাে বেঁচে আছে লেখকের মনে, পাঠকের স্মৃতিতে। স্মৃতির ফ্রেমে ধরে রাখা সেইসব গল্প থেকে সংকলিত হল এই পঞ্চাশটি গল্প। বাংলা ছােটগল্পের রাজকীয় সমারােহে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম একেবারে প্রথম সারিতে। তাঁর ছােটগল্পের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরাই জানেন, অতীনের গল্পে যেমন থাকে জীবনের নানা অভিজ্ঞতায় জারিত মানবিক সম্পর্ক ও সংকটের কথা, তেমনই দিশাহীন, দায়হীন সমাজের কথা। তাঁর গল্প পড়লে অনুভব করা যায়—তিনি না। পলাতক, না উদাসীন। তাঁর চরিত্রগত গুণটিই হল মমতা, সমবেদনা, উদ্বিগ্নতা নিয়ে এই সমাজ ও সংসারকে দেখা। আবার এই দেখার কাজটাকে অতীন যেভাবে প্রকাশ করেন তার রীতিটাই ভিন্ন ধরনের। আগাগােড়া হিসেব মিলিয়ে, ছক কষে, জ্যামিতিক অঙ্কে তিনি গল্প লেখেন না। গল্পগুলি নিজেরাই নিজেদের মতাে গড়ে উঠেছে। গল্প বলার এই পটুত্বই অতীনকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে একেবারে সেই শুরু থেকেই। সংকলিত গল্পগুলি এই বিশিষ্ট গল্পকারের সৃষ্টির সূচনাপর্ব। থেকে সমকাল পর্যন্ত এক দীর্ঘ অভিযাত্রার স্মারক।
জন্ম :১৯৩৪ খ্রীস্টাব্দ। ঢাকা জেলার আড়াই হাজার থানার রাইনাদি গ্রামে। দেশভাগের পর ছিন্নমূল। যাযাবরের মতোই প্রায় কেটেছে যৌবন। কখনও নাবিক রূপে সারা পৃথিবী পর্যটন, কখনও ট্রাক-ক্লিনার। পরে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা। প্রধান শিক্ষকও ছিলেন একটি স্কুলে। আবারও ঠাঁই বদল। কখনও কারখানার ম্যানেজার, কখনও প্রকাশন-সংস্থার উপদেষ্টা। শেষে সাংবাদিকতা। প্রথম গল্প মফস্বল শহরের ‘অবসর’ পত্রিকায়। ‘সমুদ্রমানুষ’ লিখে পান মানিক-স্মৃতি-পুরস্কার। পরে শিশির পুরস্কার ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস :নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, অলৌকিক জলযান, মানুষের ঘরবাড়ি, আবাদ, নগ্ন ঈশ্বর, একটি জলের রেখা।