"দশটি উপন্যাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সমকালের গদ্যসাহিত্যে জয় গােস্বামীর উপন্যাস এক পরীক্ষামূলক সংযােজন। বিপন্ন এক মানুষ বারবার দ্বিধাজড়িত ভঙ্গিতে এসে দাড়ায় জয়ের উপন্যাসে। রুদ্ধশ্বাস ভাষায় খেলা করে বিষগ্ন যৌনতা, বােবা প্রেম, লুকোনাে কান্না আর একাকিত্ব। এ যেন প্রচলিত জীবনের অপ্রচলিত পাঠ। কোথাও ঘুমিয়ে পড়া দিনগুলি ঘুম ভেঙে ভেসে ওঠে রুগণ এক কবির লেখায়। কোথাও জীবনানন্দের সেইসব শেয়ালেরা প্রসঙ্গে অদ্ভুত মেয়ে রাঙা বলে, ওরা হয়তাে কোথা থেকে মার খেয়ে এসেছে...তাড়া খেয়ে এসেছে। কেউ-বা অভিশপ্তর মতাে গান বহন করে চলে মনে মনে, কিন্তু গাইতে পারে না। এক চিত্রকর বাবা আশ্চর্য চোখে দ্যাখেন, সন্ধে হলে মেয়ে সাঁঝবাতির গা থেকে আলাে বেরােয়। নারীর গর্ভে সন্তান বুনে দেওয়ার হাহাকার নিয়ে কোথাও-বা ছুটে বেড়ায় এক প্রেতপুরুষ। জয় গােস্বামীর ‘দশটি উপন্যাস’-এ সংকলিত হয়েছে মনােরমের উপন্যাস, সেইসব শেয়ালেরা, সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা, সব অন্ধকার ফুলগাছ, সাঁঝবাতির রূপকথারা, ব্রহ্মরাক্ষস, দাদাভাইদের পাড়া, হাসির কথাই তাে হচ্ছিল, অনুপম কথা, প্রেতপুরুষ। সব কটি রচনায় মগ্নচৈতন্যের আলােয় কখন যেন মুছে গেছে গদ্য ও কবিতার মাঝখানের অভ্যস্ত দেওয়াল।
জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি হচ্ছেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি বাংলা ভাষার এক আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত। জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।