কখনও কখনও কোনও লেখকের সার্থক রচনায় যেমন মুছে যায় গদ্য ও কবিতার সীমারেখা, তেমনই কি হতে পারে না কারও সিদ্ধি তছনছ করে দিল গল্প ও উপন্যাসের চরিত্র-ভঙ্গিমা? ‘ঋ’ গ্রন্থটি এমনই এক উজ্জ্বল প্রকাশ। এই গ্রন্থের কথাকার তিলোত্তমা মজুমদার সাহিত্যের অঙ্গনে নবীন, কিন্তু আবির্ভাবেই পাঠকমহলে তুলেছেন ব্যাপক আলোড়ন। ১৯৯৬ থেকে ২০০৩-এর নভেম্বর পর্যন্ত লেখা পঁচিশটি ছোটগল্প, চারটি নাতিদীর্ঘ কাহিনী, এবং একটি বড় গদ্যরচনায় সমৃদ্ধ এই সংকলনটি বিষয়ে ও লিখনে বিস্ময়কর। ‘ঋ’ শীর্ষক কাহিনীটিই দীর্ঘতম। তিলোত্তমার প্রথম বড়ধরনের গদ্যপ্রয়াস এটিই। উপন্যাস বলে মনে হলেও ছোটগল্পের একমুখী তীক্ষ্ণতায় রচনাটি অত্যন্ত ধারালো। মূল চরিত্র বিনতার শৈশব থেকে তার দ্বিতীয়বারের মাতৃত্বলক্ষণের অনুষঙ্গে কাহিনী এগিয়েছে। তৈরি হয়েছে অবশ্যম্ভাবী কিছু প্রশ্ন আর প্রতিবাদ। আচ্ছন্ন পাঠকের সামনে যা চাবুকের শব্দ তোলে। সিল্যুয়েট, অঞ্জলিকাকিমার উপসংহার, স্বস্ত্যয়ন এবং হরিয়াল উড়ে যায়— এই চারটি নাতিদীর্ঘ কাহিনী পড়তে পড়তে মনেই থাকে না, ছোটগল্প আর উপন্যাসের মাঝামাঝি জায়গায় বেড়ে-ওঠা এইসব স্বপ্নশরীরকে কী নামে ডাকা হবে। ছোট শরীরের পঁচিশটি গল্প লেখকের কবজির জোরকে বারবার চেনায়। ইতিমধ্যেই তিলোত্তমার পাঠকেরা জানেন তাঁর শক্তির স্বাতন্ত্র্য, ভাষা-ব্যবহারের অপূর্ব নির্মমতা। সব ক’টি গল্পের নির্মাণই এত আশ্চর্যের, স্তব্ধ বিস্ময়ে লেখকের বয়সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। লেখকের অভিজ্ঞতা ছুটে যায় পাঠকের অভিজ্ঞতার কাছে। একসময় তীব্রতায়, নীরবতায় অভিন্ন হয়ে যায় যেন দু’পক্ষই। ‘ডোমনি’ গল্পের মগন ডোমের বউ, কিংবা ‘ফার্ন’ গল্পের গর্ভবতী তরুণী বা ‘মেরুদণ্ড’ গল্পের আশ্চর্য পাগল—এইসব চরিত্র বাংলাসাহিত্যে চিরন্তন হয়ে গেল তাদের অভিজ্ঞতায়। আরও অপরূপ তিলোত্তমার ভাষা, যা পড়তে পড়তে যেন বন্ধ হয়ে যায় শ্বাস... চোখে হাত ছোঁয়ালেই উঠে আসে অশ্রু নয়, রক্ত।
Tilottama Majumder জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৬৬, উত্তরবঙ্গ। কালচিনি চা-বাগানে ইউনিয়ন একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৮৫-তে স্নাতক স্তরে পড়তে আসেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। ১৯৯৩ থেকে লিখছেন। পরিবারের সকলেই সাহিত্যচর্চা করেন। আনন্দ পাবলিশার্সে সম্পাদনাকর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রথম উপন্যাস: মানুষশাবকের কথা। ‘বসুধারা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে রাজপাট, একতারা, চাঁদের গায়ে চাঁদ ইত্যাদি। ভালবাসেন গান ও ভ্রমণ।