‘রম্যকথার এক ঝাঁপি’ প্রথাসিদ্ধ অর্থে রম্যরচনার বই নয়। এর নাম যদি হতো- ‘অরম্যকথার এক ঝাঁপি’, হতে পারতো। যদি হতো, ‘রম্যারম্য কথকতা’, তাও হতে পারতো। বইয়ের দু’মলাটের ভেতরে বাঁধা লেখাগুলো রম্যমোড়কে ঠাসা হলেও তাতে কৌতুকের পাশাপাশি কোন না কোন বারতা আছে। শ্লেষ ও ব্যঙ্গবিদ্রুপ অনেকগুলো লেখায় প্রশ্রয় পেয়েছে। পাঠককে তাদের লঘু ধমনীতে নিয়ে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ‘সংবাদ’ পরিবেশনার চেষ্টা হয়েছে। এর উপকরণ ও উপস্থাপনপ্রকরণ এক রকম নয়। ‘ম্যাটার’ সিরিয়াস হলেও অনেক সময় ‘ম্যানার’কে তার বিপরীত রাখার চেষ্টা হয়েছে। সব ক’টি লেখাই মূলত ঢাকার বিভিন্ন কাগজ-এ প্রকাশিত। এর কিছু দিয়েছে লেখক সমান্তর জনার শংসা; আবার, যারা মানুষকে সর্বপ্রারম্ভিক ও সর্বপ্রান্তিক বিচারে মানুষ ভাবে না এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে জাতির সর্বগৌরবের বিষয় বিবেচনা করে না- তাদের মধ্যে তৈরী করেছে এক ধরনের সংশয়বিদ্ধ ও বিপ্রতীপ পর্যবেক্ষণ। থাক, তাতে কিছু যায় আসে না। পাখির গান পাখি গাইবে। সূচিপত্র বড় হওয়ার বারো বিপদ ভয়াবহ বুদ্ধিমান টিকিয়া থাকিবার রহস্যকথা ভ্রান্তিকর বড় ভাইয়ের নাম বিভ্রান্তি শুচিশুদ্ধ লাখ পনেরো ধ্বস্তজীবনের সংলাপচিত্র কানপচানো পচাকথা আজিকার শিশু যাহা বলিব গরু লইয়া বলিব গুঁতো ঠেলা ও খোঁচা কাহিনী বাঙালির ইংরেজি শিক্ষায় গুরুর অবদান বিবাহভিত্তিক ক্রন্দন ও মনুষ্যের প্রকারাপ্রকার বারতা-চিরকালের ‘চিরতা’র জন্য অর্ডারি ড’টার ও লৌহনির্মিত শিমের বিচি সঙ্গদোষে লোহা ভাসে তোর চৌউদ্দ গুষ্ঠি ‘হুয়ার য়্যু’ নদিয়ার জন্ম তার কলকাতায় লালন, শ্রীহট্টে অসুস্থতা চট্টলায় মরণ দ্বিতীয় কোনো প্রার্থনা নাই, দ্বিতীয় কোনো যাচনা নাই মানুষ মানুষের মতো, পশু পশুর মতো হাঁটাপথ ও উড়ালপথের বহুমাত্রিক ব্যবহার সহায়সম্পত্তির কল্পক্রয় অপ্রয়োজনীয় যত শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ভোজনরসিকের ডিস্বভাবনা সাক্ষাৎকার প্রাজ্ঞজনার ফেল করতে টানাটুনি গৃহপালিত চৌর্যশিল্পীর সত্যভাষণ বিজ্ঞানবীক্ষা ও বাবার বেলুনশিক্ষা টানার এবং ঠেলার আয়োজন ভৌতিক ভুলের ‘যৌক্তিক’ মাশুল আছো কি প্রভু তুমি আপন আসনে মানুষ সর্ববিচারে দু’প্রকার মিল্ক গিভিং কাউ এক জোড়া ‘হতাশা’র গপ্পো মনুষ্যেজীবনে পদগুরুত্ব কেঁউ কি উয়ো মেরা বেটা থা দাম্পত্যবিষয়ক পরামর্শকেন্দ্র মানবজীবনে নাকের ভূমিকা বয়স একটি সংখ্যামাত্র কানের পরে বিড়াল প্রশ্ন শুধিবারে মুঠোফোনের ‘বার্তাবিপদ’ মানুষ কেন মানুষের মতো বস্তুর বিকল্প ব্যবহার কিলের চোটে ভূত নামাব হাতের নাম ‘অজুহাত’ মানুষ বড় স্ববিরোধী প্রাণী সিংহ হতে ইচ্ছা করে সিংহ আমি হব না।
ড. রণজিৎ বিশ্বাস লেখকভুবনে আবির্ভাব ১৯৭৩ সালে। প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, মানুষ ও মানবতা নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাগজে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, রম্যরচনা ও ছোটগল্প এবং ক্রিকেটবিষয়ক প্রবিবেদন ছাপা হলেও মুদ্রিত গ্রন্থসংখ্যা খুব বেশি নয়। আমার প্রথম গল্প উনিশ (অসঙ্কোচ প্রকাশ, অসবর্ণ চার কোণে চারজন), ব্যবহারিক বাংলায় ভ্রমকণ্টক, শুদ্ধ লেখা শুদ্ধ বলা, ব্যবহারিক বাংলা : যত ভুল তত ফুল, ভাষার যত গোলকধাঁধা, গৌরব আমার গ্লানি আমার, মাতৃভূমির মালিকানা, কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ, রম্যকথার এক ঝাঁপি, গল্প গল্প মনে হয় গল্প কিন্তু মোটেই নয়, প্রতিদিনের পথের ধূলায় ও হৃৎকথনের রেণুকণা তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ব্যবহারিক শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়ে রচনায় ও প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তন্বিষ্ঠতায় শ্রমশীল। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী ড. রণজিৎ বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী শক্তি কর্তৃক উপর্যুপরি চারবার পদোন্নতি বঞ্চিত এক কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি সরকারের সচিব ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত। ড. রণজিৎ বিশ্বাস দু’সন্তানের জনক অভিষেক বিশ্বাস হীরা ও উপমা বিশ্বাস মুক্তা। তাদের জননী শেলী সেনগুপ্ত। একজন শিক্ষক ও গৃহকোণশিল্পী।