"দর্শন দিকদর্শন" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: প্রাচীন ভারতীয় দর্শন শিল্প-বিজ্ঞানের অংশীদার না হতে পারে, কিন্তু তা ধর্মের ধ্বজাধারী তাে বটেই, আর ধর্মের দাসত্বের চেয়ে নিকৃষ্ট দাসত্ব আর কি হতে পারে? ৩০০০ থেকে ২৬০০ খৃষ্টপূর্ব মানবজাতির বৌদ্ধিক জীবনের উৎকর্ষ নয়, অপকর্ষেরই সময়; মানুষ তার জীবনের সর্বাপেক্ষা কম আবিষ্কার এই সময়েই করেছে। জানা গেছে যে ১০০০ থেকে ৭০০ খৃষ্টপূর্বের মধ্যে প্রথম দুই সহস্রাব্দের কঠোর মানসিক পরিশ্রমের পর মানব-মস্তিষ্ক পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল, আর এই রকমই এক স্বপ্নবিষ্ট অবস্থা থেকেই দর্শনের উদ্ভব হয়। অতএব যার প্রারম্ভই এ রকম তার প্রতি আমাদের হার্দিক শ্রদ্ধা তাে বর্ধিত হয়ইনা, বরং নিমূল হওয়ারই অধিক সম্ভাবনা থাকে। অবশ্য দর্শনের প্রভাতকালেই তার মধ্যাহ্ন প্রতিভাত হয় না। দর্শনের সুবর্ণযুগ ৭০০ খৃষ্টপূর্ব থেকে শুরু করে পরবর্তী তিন চার শতাব্দী পর্যন্ত ধরা যেতে পারে; এই সময়ের মধ্যে ভারতে। উপনিষদ থেকে শুরু করে বুদ্ধ পর্যন্ত, ইউরােপে থালেস থেকে শুরু করে অ্যারিস্টটলের যুগ পর্যন্ত দর্শন বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই দুই দর্শনধারা আপসে মিলিত হয়ে সমগ্র বিশ্বেরই দর্শনধারার উৎসে পরিণত হয়েছিল, আর এই উভয় ধারার প্রতিনিধি হয়ে নব্য প্লেটোনিক দর্শন যে কিভাবে নতুন প্রগতির পথ দেখিয়েছে পাঠক তা ক্রমশ জানবেন।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।