নিজস্ব জস্ব চেনা জগতের আশেপাশে যখনই 'কোনও বৈশিষ্ট্যে, বৈচিত্র্যে প্রভাবিত হয়েছেন, স্বদেশে কিংবা প্রবাসে, তখনই এক শৈল্পিক উপস্থাপনায় তা প্রাণ পেয়েছে নবকুমার বসুর ছোটগল্পে। উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন সব ধরনের জীবনপ্রবাহ চিহ্নিত হয়ে রয়েছে তাঁর গল্পে, এবং কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষই, শুধু তাঁর গল্পের উপজীব্য হয়েই থাকেনি, লেখার ঢঙে, বুদ্ধিদীপ্ত কুশলতায়, সংলাপে তারা একটি বিশ্বাসের ভিত্তিভূমিকেও আঁকড়ে থেকেছে। ওপর ওপর দেখা নয়, মানুষের মনের গভীরে ডুবে থাকা বিচিত্র রহস্যময়তার গল্প লেখেন তিনি, যে-মন কখনই স্থিরচিত্র নয়, বেগবান এবং চলমানও। সংগীতের মতো সাহিত্যের কোনও ঘরানায় বিশ্বাস করেন না নবকুমার, তেমনই গল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিগন্ত থেকে আহরিত বিষয়ের শিল্পিত উপস্থাপনা ছাড়া, কোনও শাস্ত্র বা বিরোধিতাও মানেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর সব গল্পই একটি নিবিড় বিশ্বাসের হাত ধরে মানুষের অস্তিত্ব আর অস্তিত্বের সংকটকেই উপলব্ধি করতে চেয়েছে মমতায়, ভালবাসায়, কখনও সুদূরপ্রসারী জিজ্ঞাসাতেও। সব গল্পেই আছে জীবনের বাঁক ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে তাঁর ছড়ানো অভিজ্ঞতা, একইসঙ্গে কখনও সীমাবদ্ধ জীবনের গণ্ডিকে অতিক্রম করারও আভাস ও স্পর্ধা। পুনরাবৃত্তিকে তিনি কাছে ঘেঁষতে দেননি, অথচ কাছাকাছি বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে, কথনভঙ্গিতে, সংলাপে। উত্তরাধিকারের যে-বিপজ্জনক সম্ভাবনা নবকুমারের গল্পে প্রবল হতে পারত, তার থেকে সরে গিয়ে যে-মৌলিকতায় তিনি স্থিতধী থেকেছেন, সেই স্বকীয়তাতেই তাঁর ছোটগল্প রসোত্তীর্ণ এবং প্রাণবন্ত
Nabokumar Bosu (১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৯) একজন বাঙালি সাহিত্যিক এবং ডাক্তার। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ বসুর পুত্র। অভাবের মধ্যে তাঁর বাল্যকাল কাটে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমএস উত্তীর্ণ হওয়ার পর শল্যচিকিৎসক হিসাবে পেশা শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডে প্রবাসী হন। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর লেখা ছোটগল্প দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর পিতা সমরেশ বসু এবং মাতা গৌরী বসুর জীবনের উপর ভিত্তি করে তাঁর 'চিরসখা' উপন্যাসটি দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।