একটি আত্মকথায় মতি নন্দী লিখেছিলেন, “খেলা আর মাঠ আমার কাছে জ্ঞান হওয়া থেকেই একটা ব্যাপার। এটাই অবশেষে আমার জীবিকা হয়েছে। খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মানুষের দেহের গুরুত্ব, দেহ সঞ্চরণের সৌন্দর্য, পরিশ্রম দ্বারা অধীত গুণাবলীর প্রকাশ যা কখনো কখনো শিল্প আস্বাদনের স্তরে উত্তীর্ণ হয়, এবং সমাজের নিচুতলার মধ্যবিত্ত মানুষের অস্তিত্বের চেহারাটি কেমন, তা আমাকে দেখিয়ে ও বুঝিয়ে দেয়।” খেলার জগৎ নিয়ে লেখা ‘স্ট্রাইকার’, 'কোনি' প্রভৃতি উপন্যাস সেই অনুভব ও স্পন্দনের স্বর্ণফসল। এই অসামান্য উপন্যাসগুলি লেখকের এক একটি স্থায়ী কীর্তিস্তম্ভ। এরই পাশে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের নিয়ে রচিত লেখকের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত ও অনুসন্ধানময় কাহিনীগুলিও বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। চারপাশের সমাজ, ক্ষয়ে যাওয়া মূল্যবোধ, বিবেকের দ্বন্দ্ব, বিবেকহীন সম্পর্ক, লোভ, স্বার্থপরতা, দারিদ্র্য, প্রেম-অপ্ৰেম, বঞ্চনা, ব্যক্তিমানুষের বিদ্রোহ, মৃত্যুভয়, স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের তীব্র অনুষঙ্গ তাঁর এই কাহিনীগুলিতে । ব্যাপ্ত হয়ে আছে। আবার স্বচ্ছ, গতিময় ও দুরন্ত কৌতূহলে ভরপুর প্রতিটি উপাখ্যান ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন মাত্রার। প্রত্যেকটি উপন্যাসে তিনি স্বতন্ত্র, কাহিনীর বুনট ও উন্মোচনে তিনি অন্বেষী ও অক্লান্ত। এই শিল্পিত প্রয়াসে এক আশ্চর্য সিদ্ধি তাঁর করায়ত্ত। তাঁর লেখা এই জাতীয় দশটি উপন্যাস— দ্বাদশ ব্যক্তি, নায়কের প্রবেশ ও প্রস্থান, বারান্দা, বাওবাব, ছায়া, দ্বিতীয় ইনিংসের পর, ভালো ছেলে, মালবিকা, ছোটবাবু ও জীবন্ত নিয়ে এই সংকলন।
Moti Nandi ( জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৩১ - মৃত্যু: ৩ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন ভারতের কলকাতা ভিত্তিক একজন বাঙালি লেখক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মতি নন্দী ছিলেন মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক এবং উপন্যাসিক ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি আনন্দ পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'কোনি'।