"গল্পসমগ্র ৩" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বলেন, লিখলেন, জয় করলেন—কোনও অলেখকের কৃতিত্ব সম্পর্কে এই জাতীয় পরিচয় এখন বহুল তথা ভুল ব্যবহারে জীর্ণ। অথচ বাংলা সাহিত্যে সুবােধ ঘােষের আলােড়ন-জাগানাে আবির্ভাবের বর্ণনায় এই প্রবাদপ্রতিম বাক্যই হয়ে ওঠে প্রতিরােধ্য। আক্ষরিক অর্থে একমাত্র সত্যি, আদ্যন্ত যথার্থ। জীবন ও জীবিকার বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সঞ্চয়ের ঝুলিটি পূর্ণ করে একটু বেশি বয়সেই কলকাতায় এসেছিলেন সুবােধ ঘােষ। গল্পলেখার কথা ভাবেননি কোনওদিন। একটি ঘরােয়া সাহিত্যবাসরে স্বরচিত গল্প পড়ার জন্য বন্ধুরা প্ররােচিত করল তাঁকে। হঠাৎ করেই তিনি লিখে ফেললেন জীবনের প্রথম গল্পটি অযান্ত্রিক’। এর পরই ‘ফসিল’ রাতারাতি বিখ্যাত সুবােধ ঘােষ। পাঠকরা তাঁকে বরণ করে নিলেন, সমালােচকরা জানালেন বন্দনা। অনুজ লেখককুল তাঁকে বসালেন প্রেরণার আসনে। এ-সম্পর্কে রমাপদ চৌধুরীর স্মৃতি, “লিখতে শুরু করেছি যখন, তখন আমাদের সামনে দুটি পথ—তারাশঙ্কর আর। সুবােধ ঘােষ” ; বিমল করের স্বীকারােক্তি, “তাঁর লেখা ছিল আমার প্রেরণা”; মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষ্য, “ছােটগল্পের ক্ষেত্রে তিনি একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেন। বাংলা ছােট গল্পের জগতে বিস্ময়েরই অন্য নাম সুবােধ ঘােষ। বৈচিত্র্যেরও। শুধু ‘অযান্ত্রিক আর ‘ফসিল’ নয়। পরপর, একের পর এক ‘সুন্দরম', ‘পরশুরামের কুঠার’, গােত্রান্তর’, ‘গরল অমিয় ভেল’। জতুগৃহ', 'বারবধূ',‘সুজাতা। ‘অলীক’, ‘ঠগিনী’, ‘শ্মশানচাঁপা। আরও, আরও। প্রত্যেকটি উত্তাল সমুদ্রের নতুন ঢেউ। ঝাপটের পর ঝাপট। লেখকদের লেখক সেই সুবােধ ঘােষেরই সমূহ গল্প নিয়ে খণ্ডে-খণ্ডে এই ‘গল্পসমগ্র’। তৃতীয় খণ্ডের আনন্দ সংস্করণ প্রকাশিত হল।
তিনি একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারীবাগে ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লেখক জীবনের প্রথমে আনন্দবাজার পত্রিকাতেও সাংবাদিকতা করেছেন। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রচুর খ্যাতি ও পুরস্কারের ডালি সহ তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। এর মধ্যে রচনা করে গেছেন সমাজের হিন্দুয়ানী কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। লড়েছেন কলম যুদ্ধ। প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক', এরপর 'ফসিল'। তাঁর আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত), তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া (১৯৫৮) প্রমূখ। এই লেখাগুলোই তার প্রাণের কথা বলে গেছে কালের পরিক্রমায়।