"ভারত প্রেমকথা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ধ্রুপদী সাহিত্যের রূপ ও ভাব খণ্ডকালের সমধ্যে সীমিত নয়। পৃথিবীর অন্যান্য ক্লাসিক সাহিত্যের কালােত্তর প্রেরণার শক্তিতে সঞ্জীবিত হয়ে আছে কবি বাল্মীকির রামায়ণ এবং ব্যাসদেবের মহাভারত। এই সাহিত্যকীর্তিগুলির মধ্যে মানবজীবনের চিরকালীন আনন্দ ও বেদনার ব্যাকুলতা বাত্ময় হয়ে আছে। এই মহাপ্রাণময় দুটি মহাকাব্য, মানুষের মনের আকাশে নিত্যনতুন আলােকের প্রসন্নতা ছড়ায়। যুগ যুগান্তরের কবি-শিল্পীরা প্রাচীন এই কাব্যগাথা থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করার প্রেরণা পেয়েছেন। আবার ক্লাসিকের রূপ ও ভাবের ভাণ্ডার থেকে আহৃত উপাদান নিয়ে রচিত এই নতুন সৃষ্টিগুলি আধুনিক সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে, পুরাতনের পুনরাবৃত্তি হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য ধ্রুপদী সাহিত্যের তুলনায় মহাভারতের আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে। মূলকাহিনী ছাড়াও এমন শত শত উপাখ্যানে এই মহাকাব্য আকীর্ণ যার মূল্য আজও মিথ্যে হয়ে যায়নি, যার আবেদন আজও ব্যর্থ হয়নি। যেমন মহাভারতের বিচিত্র প্রেমকাহিনীগুলি সর্বযুগের নরনারীর প্রণয় ও অনুরাগের অমর চিত্ররূপ। এইসব প্রেমােপাখ্যানের মধ্যে কয়েকটি বহুল প্রচলিত। কয়েকটি পাঠকসমাজে তেমন প্রচার লাভ করেনি। এইসব অল্প-প্রচারিত কাহিনীও প্রেমের রহস্য, বৈচিত্র্য ও মহত্ত্বের এক একটি বিশেষ রূপের পরিচয়। ভারত প্রেমকথা’র কুড়িটি গল্প এই রকমই কয়েকটি মহাভারতীয় প্রণয়কাহিনীর পুনর্গঠিত বা নবনির্মিত রূপ। প্রতিটি কাহিনী লেখকের মনীষা ও শিল্পনির্মিতির পরিচয় বহন করছে। বহন করছে নর-নারীর প্রেম যে এক সুসহ রহস্য— এই চিরন্তন সত্যটি। প্রমথনাথ বিশীর ভাষায় “কাহিনীগুলি কেবল ভাবের বাহন মাত্র নয়, নিজ মূর্তিতে সমুজ্জ্বল ও নিজ প্রাণে সঞ্জীবিত। প্রাচীন কাহিনীর আধারে সুবােধবাবু চিরকালীন সুখ-দুঃখের ও হাসি-অশ্রুর অমৃত পরিবেষণ করিয়াছেন। এগুলি জ্ঞানের বস্তু নয়, জীবনের সামগ্রী।”
তিনি একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারীবাগে ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লেখক জীবনের প্রথমে আনন্দবাজার পত্রিকাতেও সাংবাদিকতা করেছেন। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রচুর খ্যাতি ও পুরস্কারের ডালি সহ তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। এর মধ্যে রচনা করে গেছেন সমাজের হিন্দুয়ানী কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। লড়েছেন কলম যুদ্ধ। প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক', এরপর 'ফসিল'। তাঁর আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত), তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া (১৯৫৮) প্রমূখ। এই লেখাগুলোই তার প্রাণের কথা বলে গেছে কালের পরিক্রমায়।