মমাজ ভাঙছে। মূল্যবােধ বদলে যাচ্ছে। 'নিরনারীর পারস্পরিক সম্পর্ক জটিল থেকে আরও জটিল হচ্ছে। এই জটিলতার মধ্যেই কোথায় যেন একটা ইতিবাচক সম্ভাবনা আমাদের বাঁচার পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। যারা হর্ষ দত্তকে পড়েছেন, যারা তাকে পড়েন এবং তাকে পড়বেন, তাদের কাছে এই লেখকের সাহিত্যকীর্তি সম্বন্ধে ওপরের ওই বার্তাটুকু নিছক অলংকার নয়। লেখকের চোখ দিয়ে দেখা একটি জগৎ। আর, এই জগতেই আপনি, আমি, আমাদের মতাে অসংখ্য মানুষের বিচরণ। হর্ষ দত্তের প্রথম উপন্যাস থেকে তার সাম্প্রতিকতম সৃষ্টি, সর্বত্রই এই জীবনের উদ্ভাস। অনেকেই বলে থাকেন, হর্ষ দত্তের সাহিত্য মধ্যবিত্তের জীবনবৃত্তান্তে অনুপুঙ্খ। কথাটি প্রশংসাসূচক হলেও, প্রশ্ন থেকে যায়। জীবনকে কি ‘বৃত্ত’-এর আবর্তে বেঁধে রাখা সম্ভব? সাহিত্য মানে তা কোনও শৃঙ্খলিত সীমানা নয়। পটভূমি, পরিবেশ, সেখানকার মানুষজন, বিশেষ কিছু চরিত্র এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এই নিয়েই। সাহিত্যিকের যত কিছু কারবার। এই সম্পর্কে ভর করেই তাে চরিত্রের বিস্তার এবং পরিণতি। এক একটি জীবন কখনও হয়ে ওঠে ধ্রুবতারা। আমাদের পথ দেখায় কখনও মুক্তো হয়ে জীবনকে করে তােলে দ্যুতিময়। তাই, তার সাহিত্যসৃষ্টিকে কোনও নির্দিষ্ট বৃত্তে বন্দি করা যায়। তাঁর শিল্পভাবনার আর একটি দিকের কথা বলতেই হয়। সুধী সাহিত্যসমালােচক সেই দিকটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই ভাষায়: হর্ষ দত্তের শিল্পীমন প্রকৃতির জীবনায়নে মানব-অস্তিত্বের এক ভিন্ন পৃথিবীর সন্ধান পায়। ঠিক এতটা নিসর্গ-মগ্ন মনের লেখক একালে যেন দেখি না। এই লেখকের উপন্যাসের মধ্যে কোথায় যেন একটা ধ্রুপদী চলন কাজ করে চলেছে। অথচ, সেখানে শব্দের ব্যবহার এবং ভাষার বুনুনিতে একটা ঝকঝকে আধুনিকতার সাবলীল ওঠাবসা। প্রতিটি রচনাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনওটা কারওর পরম্পরায় বাঁধা নয়। মেজাজি লেখক বলতে যা বােঝায়, হর্ষ দত্ত যেন ঠিক তাই। যা বলা হয়েছে, সেটাই যেন শেষ কথা। এর আগে পরে বলে কিছু নেই। দুই দশক জুড়ে লেখা হর্ষ দত্তের এই দশটি উপন্যাস আছে অন্তরে’, ‘রাজকন্যা রাজকন্যা’, ‘মিলনলগ্ন’, ‘বিকর্ণ’, মার্গারিট, এই সূর্যালােক, ‘স্মৃতিচিহ্ন’, ‘তপস্যার রং’, ‘সবুজ প্রতিমা’, ‘ও শিমুল, ও পলাশ’, ‘মেঘ উৎসব’ এই সংকলনে গৃহীত হয়েছে।
Harsha Dutta-র জন্ম ১৯৫৫, কলকাতায়। শিক্ষা : বঙ্গবাসী কলেজ-স্কুল, রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম বিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর এম. এ. এবং এম. ফিল.। স্কুলের দিনগুলিতেই সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি। কলেজ-জীবনে গল্প লিখেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে। ১৯৮৪-তে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কামাদি কুসুম সকলে’ গল্পটির মাধ্যমে বৃহত্তর আত্মপ্রকাশ। এই পত্রিকাতেই মুদ্রিত মিতায়তন প্রথম উপন্যাস ‘অমল’। উপন্যাসটি সর্বস্তরের পাঠকের অভিনন্দন-ধন্য। প্রথম বড় উপন্যাস ‘ময়ূরাক্ষী, তুমি দিলে’ বহুর ভিড়ে এক স্বাতচিহ্নিত সৃষ্টি। জীবিকা : সাংবাদিকতা। ‘দেশ’ পত্রিকার সহ সম্পাদক। ‘সমরেশ বসু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯২) এবং ‘বিচয়ন সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৯৬)-এ ভূষিত।