”শ্রুতিনন্দন” বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা কথা: ভারতীয় রাগসঙ্গীত এবং অন্যান্য প্রকারের কণ্ঠসংগীতের অনন্যা সাধারণ শিল্পী অজয় চক্রবর্তী । ভারতীয় এবং বিদেশী ভাষায় ভারতীয় সংগীত সম্বন্ধে অনেক বই লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে, কিন্তু কোনও সর্বজনপ্রিয়,লব্ধপ্রতিষ্ঠ ভারতীয় সংগীত কণ্ঠসংগীত শিল্পী এ পর্যন্ত কোনও গ্রন্থে বোধহয় সংগীতের ক্রিয়ান্তক দিক (পারফর্মিং আসপেক্ট) সংক্রান্ত নানা সমস্যা এবং সেগুলিকে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে সমাধানের পথনির্দেশ করে যাননি। ‘শ্রুতিনন্দন’ অজয় চক্রবর্তীর প্রথম গ্রন্থ; বিষয়বস্তুর নিরিখেও গ্রন্থটি প্রথম এবং অপূর্ব। ‘ শ্রুতিনন্দন’ একটি ভাবনা যার অপর দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ তাঁর প্রতিষ্ঠিত অদ্বিতীয় সংগীত প্রতিষ্ঠানটি। এবং সেই প্রতিষ্ঠান-সৃষ্টির নেপথ্যের চিন্তাগুলি গ্রন্থটির উপজীব্য।
সমাজ ও দেশের প্রতি নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া যেকোনও সংগীতশিল্পীরই উচিত। আমাদের দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের কালজয়ী উপাদান, ভারতরে চিরায়ত সংগীতকে প্রজন্ম পরম্পরায় অক্ষুণ্ন রেখে জনমানসে সঞ্চারিত করার জন্য লেখক তাঁর সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছেন। দেশের ও সমাজের যাঁরা নিয়ন্তা এবং সর্বসাধারণকে, আমাদের ঐতিহ্যবাহী অমূল্য উত্তরাধিকার সংরক্ষণ এবং সমৃদ্ধ করতে তিনি অনুরোধ করেছেন তাঁর গ্রন্থে। ভারতীয় রাগসংগীতকে বিশ্বশান্তির অন্যতম প্রশস্ত পথ কেন বলা যায় সে সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যুক্তিনিষ্ঠ মতামত দিয়েছেন তিনি। সংগীতের উচ্চনীচ বর্ণভেদ,শুধু ঘরানার সংকীর্ণ গণ্ডিতে রাগসংগীতকে আবদ্ধ রাখার এবং সংগীত বিদ্যাদানে অযৌক্তিক কার্পন্যের উদ্বেগজনক পরিণাম সম্পর্কে লেখক আমাদের সতর্ক করেছেন। তা ছাড়া, একালের সংগীতশিল্পী মাত্রেরই অবশ্যজ্ঞাতব্য কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য লেখক জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতার নিকষে পরীক্ষা করে। কোনও ভারতীয় ভাষঅয় মাইক্রোফোন, হল অ্যাক্যুসটিক্স ইত্যাদি বিষয়ে এদেশের সংগীতশিল্পীদের কোনও রচনা বোধহয় নেই। লেখক এ ব্যাপারেও পথপ্রদর্শক। সংগীতশিক্ষার ক্ষেত্রেগুরুর প্রতি ঐকান্তিক নির্ভরতা ও নিষ্ঠা আধুনিক মানসিকতার বিরোধী নয়-গ্রন্থকার এই সত্যটিও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সূচিপত্র * প্রস্তাবনা * শ্রুতিনন্দন কথা * সংগীতশিক্ষার সমস্যা ও সমাধান * গুরুশিষ্য পরম্পরা * রাগসংগীত,শিল্পী ও শ্রোতা * রাগসংগীতের সহযোগী শিল্পী ও শ্রোতা * আধুনিক শিক্ষা ও রাগসংগীত * সংগীত শিল্পী, পৃষ্ঠপোষক ও সমালোচক * রেকর্ডিং * গান শোনাবার বিজ্ঞান * রাগসংগীত ও বিশ্বশান্তি
Ajoy Chokroborti-এর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৫২, উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে। পড়াশোনা ইছাপুরের নর্থল্যান্ড হাইস্কুলে; রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ। খেলাধুলায় ইউনিভার্সিটি ব্লু হন। দু বছর বয়সে সংগীতশিক্ষা শুরু পিতা শ্রীঅজিতকুমার চক্রবর্তীর কাছে। পরে পান্নালাল সামন্ত, কানাইদাস বৈরাগী, মুনব্বর আলি খান এবং জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে সংগীতশিক্ষা। ১৯৭৮-এ কলকাতায় সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি স্থাপিত হলে প্রথম স্কলাররূপে যোগদান এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ওই সংস্থার গুরু এবং এক্সপার্ট কমিটির সদস্য পদে নির্বাচিত। এস.আর. এ-র প্রথম এবং একমাত্র স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ফেলো। দেশে-বিদেশে বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য—১৯৮৯-তে চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়করূপে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, ১৯৯৩-এ ‘কুমার গন্ধর্ব’ জাতীয় পুরস্কারের প্রথম প্রাপকের সম্মান। ১৯৮১ থেকে এ যাবৎ আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার নানা দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ভারতীয় সংগীতের প্রসারে ব্যাপৃত। ১৯৯৭-তে আমেরিকার নিউ অর্লিয়ান্স শহরের সম্মানিত নাগরিকের স্বীকৃতিলাভ। বিবাহ ১৯৭৯ সালে। সহধর্মিণী শ্রীমতী চন্দনা প্রতিষ্ঠিত সংগীতশিল্পী। কন্যা কৌশিকী সম্ভাবনাময়ী সংগীতশিল্পী, পুত্র অনঞ্জন। লেখক ‘শ্রুতিনন্দন’ সংগীত শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠাতা। দেশেবিদেশে তাঁর পঞ্চাশের বেশি ক্যাসেট, সি.ডি প্রকাশিত।