বিশিষ্ট ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী (সমকালীন ইতিহাসের চর্চা ও ব্যাখ্যায় এক নতুন মাত্রা যােগ করেছেন। স্থান (স্পেস) ও কালের (টাইম) পরিপ্রেক্ষিতে, দূর অতীত ও অনতিঅতীতের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে তাঁর পারঙ্গমতা প্রশ্নাতীত। শ্ৰীত্রিপাঠীর শিক্ষা ও সংস্কার, রুচি ও প্রবণতা, তথ্য সংগ্রহ ও বিচার-ব্যখ্যা তাঁর প্রতিটি ইতিহাস-গ্রন্থের মুল্য ও মর্যাদাকে অন্য স্তরে উন্নীত করেছে। এই সযত্ন সৃজিত গ্রন্থটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই গ্রন্থের মূল উপজীব্য ভারতের ইতিহাস। বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভারতের এক যুগসন্ধির ইতিবৃত্ত। ভারতের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রচিত মুখ্য প্রবন্ধটিতে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ—এই তিন কালকে লেখক সমভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বলা যায়, এই ত্রিকালই তাঁর রচনায় প্রভাব ফেলেছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল এক বিশেষ ধরনের আন্দোলন, তার লক্ষ্য ও উপায়ের প্রেক্ষিত অন্য দেশের তুলনায় স্বতন্ত্র। স্বাধীনতা বলতে দেশের মানুষ যা বুঝেছিল তা আসেনি। তার ফল, এই মুহুর্তের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘাত ও দেশের বেহাল অবস্থা। এই সন্ধিযুগের আলােচনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধে এসেছে গান্ধী, নেহরু ও নেতাজি প্রসঙ্গ। স্বাধীনােত্তর ভারতের রূপ কী হওয়া উচিত সে-বিষয়ে গান্ধী, নেহরু ও সুভাষের মধ্যে স্পষ্ট মতদ্বৈধ ছিল। নেহরু জয়ী হয়েছিলেন গান্ধীর হত্যা ও সুভাষের দেশত্যাগে। কিন্তু জওহরলাল কি সত্যিই জয়ী হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লেখক ‘মহামানবের সাগরতীর’ ভারতবর্ষের অন্তলোকে তাঁর চেতনাকে প্রসারিত করেছেন। আবার ভারতভূমি থেকে আলােচনাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহির্বিশ্বে, জাতীয়তাবাদ থেকে মহাজাতীয়তাবাদে। কখনও বা যুদ্ধ, শান্তি, বিপ্লব, মৌলবাদ প্রভৃতি বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে। সমকালীন এবং সাম্প্রতিক ইতিহাসের বিচার-বিশ্লেষণে সবসময় ঐতিহাসিক-লেখক হয়তাে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেননি। সে-বিষয়ে তিনি সজাগ। কিন্তু এই গ্রন্থের কোথাও তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত ইতিহাসকে বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন করেনি। ঐতিহাসিক মূল্যায়ন হয়ে দাঁড়ায়নি কোনও বিতর্কিত অপব্যাখ্যা। এখানেই এই গ্রন্থের অভিনবত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।
জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ । মেদিনীপুরের দেভোগ-এ । পড়াশোনা তমলুক হ্যামিলটন হাই স্কুলে, প্রেসিডেন্সি কলেজে, কলম্বিয়া ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন । গৌরবময় সাফল্য পরবর্তী ক্ষেত্রেও । কর্মজীবন : প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান (১৯৫৭-৬৯) ; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আশুতোষ অধ্যাপক (১৯৬৯-৮৬) । ইউ. জি. সি-এর সদস্য | সিন্ডিকেটের সদস্য ও ডিন ।। গবেষণা ; প্রথম ফুলব্রাইট স্কলার, রকফেলার ফেলো ইত্যাদি । গান্ধী লেকচারার, লন্ডন (১৯৭৪)। রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে আমন্ত্রিত । বিবাহ ১৯৪৬ সালে। স্ত্রী দীপ্তি ত্ৰিপাঠী—বর্তমানে বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা । দুই সন্তান । পুত্র ও কন্যা উভয়েই কৃতী। রচনাঃ প্রথম গবেষণা গ্রন্থ -Trade and Finance in the Bengal Presidency 1793-1833 আর্চায যদুনাথ অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ভিনসেন্ট হালোঁ প্রমুখ। কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত । ক্লাসিক” রূপে স্বীকৃত । অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, সাংস্কৃতিক যোগাযোগে চরমপন্থীদের যে বিশেষ মানুসিকতা গড়ে উঠছিল তার বিশ্লেষণ The Extremist Challenge পথিকৃৎ । বিদ্যাসাগরের অভিনব মূল্যায়ন Traditional Moderniser গ্রন্থে । প্রবন্ধ সংকলন—“ইতিহাস ও ঐতিহাসিক” । ইতিহাস দর্শনের প্রথম পদক্ষেপরাপে এ-গ্ৰন্থ পেয়েছে আনন্দ পুরস্কার ।