ভূমিকা বাংলাদেশের কৃষির ইতিহাস সুপ্রাচীন। আর্য আগমনের পূর্ব থেকে ইংরেজ আমল পর্যন্ত এদেশের কৃষি-সভ্যতার ক্রমবিকাশ এ গ্রন্থের প্রথম দুই পরিচ্ছেদে সন্নিবেশিত। খনার বচনে এ দেশের আদি কৃষি বিজ্ঞান। এদেশের একটি প্রাচীন জ্যোতিষ ও হোরা শাস্ত্রও বটে। গণ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও বলা চলে। খনার বচন চাষাবাদ, গার্হস্থ্য জীবন ও পশুপান সম্পর্কে নির্দেশাবলী সুশৃংখলভাবে বর্ণিত।অতি প্রাচীন কাল থেকে এদেশের জগৎ ও জীবন দর্শন কৃষি ভিত্তিক হয়ে গড়ে উঠেছে। ফলে, এ দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে খনার বচনের অবদান অপরিসীম। খনার বচন শুধু প্রাচীন ফসলাদি সম্পর্কেই জানা যায়।ধান ও কলা সম্পর্কে অধিক বচন রয়েছে। তন্মধ্যে ধান সম্পর্কে বেশি। এ গ্রন্থের তৃতীয় পরিচ্ছেদে খনার কাল, পরিচিতি, ঐতিহাসিক এবং খনার বচনের নৃতাত্তিক,ভাষাতাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রদত্ত। এতে আমাদের ভাষা সাহিত্য ও কৃষ্টি সম্পর্কে প্রাসংগিক আলোচনা রয়েছে। পরবর্তী কোন গবেষক ওদিকে পূর্ন গবেষণা চালিয়ে এ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য পরিবেশন করতে পারেন। এককালে খনা সম্পর্কে নানা কিংবদন্তী ছিল। এ গবেষণা কাজে, খনা-অস্তিত্ব ও ঐতিহাসিক ভিত্তি যথাসম্ভব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে বিচার করার চেষ্টা হয়েছে। গ্রন্থের চূড়ান্ত রূপ প্রণয়নেরপুর্বে কলকাতা , বাংলাদেশে এশিয়াটিক সোসাইটি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যত্র অর্ধ ডজনের মত সেমিনার প্রদত্ত হয়েছিল। এসব আলোচনা-সভায় ব্যক্ত পণ্ডিতদের অভিমত গ্রাহ্য করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য আমি উড়িষ্যায় একপক্ষকাল , তেলেগু তামিল ভাষী অঞ্চলে একপক্ষক ও বালান্দা প্রত্ন সংগ্রহশালায় একপক্ষকার অবস্থান করেছি। উল্লেখ্য যে, উড়িষ্যায় খনার বচনের প্রভাব আজও খুব বেশি এবং চন্দ্রকেতুগড়ে ( যেখানে বালান্দা প্রত্ন সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত) উৎখননে খনা-মিহিরের বাসভবন আবিষ্কৃত। খনার বচন প্রাচীন হলেও এর ভাষায় অধুনা প্রাচীনত্বের ছাপ কম। এর ভাষা, ছন্দ ,ব্যাকরণ ও ধ্বনিতত্ত্বে আজও যা কিছু প্রাচীন অবশিষ্ট তা একটি বিশেষ অধ্যায়ে আলোচিত।তাই বোধ করি ছিল এককালে খনার বচনের আদি ভাষা ব্যাকরণ ও ধ্বনিতত্ত্ব। খনার বচনের শব্দকোষও সন্নিবেশিত। দুর্বোদ্য, প্রাচীন ও অপ্রচলিত ,শব্দাদি শুধু এতে স্থান পেয়েছে। উড়িয়া ও বাংলা খনার বচনে সাদৃশ্য-বৈশাদৃশ্য কোথায় , এ সম্পর্কেও একটি ক্ষুদ্র পরিচ্ছেদ সংযোজিত।তদুপরি সংকলন অংশের যথাস্থলে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আছে। গ্রন্থের একটি বিরাট অংশ জুড়ে খনার বচনের সংকলন। এতে শুধু খনার বচনা্ই সংকলিত হয়নি ,বরং খনার বচনের উড়িয়া পাঠ সহ বিভিন্ন পাঠান্তর প্রদত্ত্ এবং সঠিক পাঠ নির্ধারণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঘাঘ ও ভড্ডরীর বচন, কানাড়া,তেলেগু,নেপালি, ও কিছু জাপানি প্রবাদ -প্রবচন এবং বাংলা উড়িয়া ও অহমিয়া ডাকের কথাও উদ্ধৃত এবং তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। এবং প্রাপ্ত প্রাসংগিক তথ্যাদিও পরিবেশিত। সংকলনের পূর্বে প্রদত্ত খনার বচনের সংক্ষিপ্ত সার খনার বচনের উপলব্ধিকে সহজ করবে। বর্তমান গ্রন্থটি পূর্বোল্লিখিত প্রকাশিত অভিসন্দর্ভের ব্যাপক পরিবর্তন নব রূপায়ন। ড. আলি নওয়াজ
সূচি প্রথম খন্ড * অবতরণিকা: কৃষি সভ্যতার ইতিকথা * ইংরেজ আমলে কৃষি ও কৃষি সভ্যতার অবক্ষেপ * খনা ও তার ঐতিহাসিকতা * উপনিবেশিক আমলে খনার বচন * খনার বচনে দেশী পণ্ডিতদের আগ্রহ * খনার বচন সংগ্রহে বিঘ্ন * খনার বচন সংখ্যা * থনার বচনের পাঠান্তর ও সঠিক পাঠ * খনার বচানের সংক্ষিপ্ত সার * খনার বচন ও বাংলাদেশের ঐতিহ্য : একটি সমীক্ষা দ্বিতীয়খন্ড * সার্থক সংকলন * আবহ-প্রবহ-বার্তা * কৃষি ফল ও ফসল * কলা * নারিকেল সুপারি * আম-কাঁঠাল * তাল-খেজুর * সরিষা কার্পাস ও কলাই * ফসল: বিবিধ * বাঁশ * বিবিধ * ধান * আখ, আদ,মুল,তিল,পাট, পান,শণ,কার্পাস, সরিষা্ ইত্যাদি * পশু পালন * গণ-স্বাস্থ্য * জ্যোতিষ ও হোরাশাস্ত্র বর্ষফল জ্যোতিষী গণনা জন্মলগ্ন জন্মস্থ গ্রহ বিচার বিধি-নিষেধ পরমায়ু গণনা শিষ্টা-দুষ্টা নারী লক্ষণ গর্ভস্থ সন্তান প্রশ্ন গণনা হাঁচি-টিকটিকির বিচার * খনার বচনের ভাষা ,ছন্দ, ব্যাকরণ ও ধ্বনিতত্ত্ব * বাংলা ও উড়িয়া খনার বচন * খনার বচনের অভিধান ধ্বনিতত্ত্ব ও ব্যাকরণ চিত্র-সূচি * চন্দ্রকেতু গড় ও খনামিহিরের ঢিপির (দেবালয়) মানচিত্র * খনামিহিরের ঢিপির একাংশ * খনামিহিরের বাসভনের একাংশ * খনামিহিরের বাসভবনেরর বাসভবনের ভূগর্ভস্থ কামরা * অমিত্তকুন্ডু * বামে বরা (বরাহ)রাজার বাড়ি, ডানে খনামিহিরের ঢিপি, মধ্যে সরুপথ * বরা রাজা ও খনামিহিরের ঢিপির একাংশ * পরিশিষ্ট * প্রন্থপঞ্জি
জন্ম : ২৫শে ডিসেম্বর, ১৯২৬; কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাস্থ সাহেবাবাদ গ্রামে। মৃত্যু : ১১ই ফেব্রুয়ারী, ২০০৫; ঢাকায় ।। সুসাহিত্যিক, বিশিষ্ট গবেষক, চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আলি নওয়াজ ১৯৫১ সনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ. করেন। ১৯৬৫ সনে পিকিং-এর বেইজিং ভাষা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চীনা ভাষায় ডিপ্লোমা (ডিপ্লে-হান) করেন। ১৯৮০ সনে ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খনার বচনের ওপর অভিসন্দর্ভের জন্যে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর প্রথম শিক্ষকতাস্থল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। তারপর করাচী সেন্ট্রাল গবর্নমেন্ট কলেজ। পাশাপাশি করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা এবং সবশেষে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকেই তিনি ১৯৮৭ সনে অবসর গ্রহণ করেন। কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গবেষণা সহ প্রায় ২৫টি গ্রন্থ-প্রণেতা ড. নওয়াজ সাহিত্য ক্ষেত্রে। অবদানের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সম্মানসূচক ডি.এস-সি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট পার্লামেন্ট (দিল্লী) থেকে বাংলাদেশ সাহিত্য উন্নয়ন রত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্যে তিনি ভূমিসংস্কার ও খনার বচনের ওপর গবেষণা করেন। তার যুগান্তকারী গবেষণা-গ্রন্থ বাংলাদেশের ভূমিব্যবস্থা ও ভূমিসংস্কার। (ঐতিহাসিক পর্যালােচনা) এর জন্যে তিনি ২০০৪ সনে এশিয়াটিক সােসাইটি অব । বাংলাদেশ কর্তৃক ইব্রাহিম মেমােরিয়াল স্বর্ণপদক লাভ করেন। খনার বচনের ওপর তার পিএইচডি গবেষণা-কর্মটি বর্ধিত কলেবরে খনার বচন ও কৃষি এবং খনার বচন কৃষি ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি' নামে দুটো অসাধারণ গবেষণাগ্রন্থ আকারে প্রকাশিত। একই বিষয়ে নতুন। কলেবরে ‘খনার বচন কৃষি ও কৃষ্টি' গ্রন্থটি মুদ্রণাধীন রেখে তিনি ইন্তেকাল করেন। সুতরাং বর্তমান গবেষণা-গ্রন্থটি তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হলাে।। ড. আলি নওয়াজ জীবনের শেষ প্রান্তে কাজ করছিলেন বাংলা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ভাষায়। সমউপাদান এবং এর নৃতাত্বিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে। কিন্তু কাজটি অসমাপ্ত রেখেই। তাকে চলে যেতে হয়।