"তালাশ (প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১০)" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে: তালাশ উপন্যাসের বিষয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধাক্রান্ত মানুষ। সেসব মানুষ, যারা বিক্ষত, বিপর্যস্ত, উন্মল, অভিঘাতস্নাত, বিক্ষুব্ধ এবং জেদী। তাদের খোঁজ পড়েছে। যুদ্ধের আটাশ থেকে ত্রিশ বছর পর এ সময়ের পরিধিতে। তৎকালীন নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের একজন সমাজকর্মী কিছু স্মৃতি টেবিলের কাচের নিচে সংরক্ষণ করতাে। সেই সুবাদে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, '৭১-এর বীরাঙ্গনা মরিয়মের ঠিকানাটা তার মনে থাকে, যা যুদ্ধের আটাশ বছর পর চলে আসে গবেষক মুক্তির হাতে। সেখানে মরিয়ম আছে আবার নেইও। কারণ তার পেছন পেছন নয় মাসের গল্প-গাথা ঢাকা ছেড়ে পদ্মা পেরিয়ে চলে গেছে বহুদূর। মুক্তি সেদিকে পা । বাড়ায়; মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকার, অনাবিকৃত পথে কাহিনী এগিয়ে চলে... খোজ, নিরন্তর খোজ। তালাশ উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলেছে অনুসন্ধান... অভিযাত্রা... গ্রন্থিত ও স্বীকৃত ইতিহাসের পৃষ্ঠার বাইরে, জনপদের সীমানাগুলােতে, সম্ভাব্য। মৃতের তালিকায়, মুখ্যত স্মৃতিতে, এমনকি বিস্মৃতিতে। শাহীন আখতার পাঠকদেরকেও নানাবিধ তালাশে প্ররােচিত করবেন এই উপন্যাসে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের, যুদ্ধপরবর্তী ঘাতপ্রতিঘাতের। সেখানে কথকের একটিমাত্র কণ্ঠের প্রত্যাশায়। পাঠক বিড়ম্বিত হতে পারেন। সেই অধিকারিত্ব লেখক স্বয়ং প্রত্যাখ্যান করে কথামালা গেঁথেছেন বিবিধ কণ্ঠে। মরিয়ম। হয়তাে স্বতন্ত্র, কিন্তু অদ্বিতীয় নয়। তার সম্পর্কে শুধু এটুকুই। বলা যায়- সে স্বাধীনতার ৩০ বছর পর্যন্ত হামামদিস্তায় থেঁতলানাে দেহ আর কোরবানির মাংসের মতাে ভাগে ভাগে। বেঁটে দেয়া জীবন নিয়ে বাঁচে। শাহীনের পাঠকের পক্ষে স্বগৃহের ঘেরাটোপের বাইরে। পদচারণা ছাড়া, ধাক্কা খাওয়া ছাড়া পরিত্রাণ নেই। এই ধাক্কাটা মুক্তিযুদ্ধাশ্রয়ী গল্প-উপন্যাস থেকে তালাশকে স্বতন্ত্র রাখবে। তালাশ উপন্যাসের জমি বাস্তবের। মানুষের যুদ্ধাভিজ্ঞতা এর ভিত। আর এটি নির্মাণ হয়েছে কল্পনার খুঁটি, চাল, বেড়া দিয়ে। তাতে ইতিহাসের সন্ধান না করে, পাঠক সাহিত্যের তালাশ করবেন। উপন্যাসকে সত্য কথনের দায় থেকে মুক্তি দেয়া আশু জরুরি।
শাহীন আখতার জন্ম কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় পড়াশােনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখছেন। - দ্বিতীয় উপন্যাস তালাশ-এর জন্য। প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই ১৪১০ পুরস্কার পান। বইটির ইংরেজি তরজমা দ্য সার্চ নামে দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। তালা-এর ৩ কোরিয়ান ভাষার সংস্করণ আর সখী রঙ্গমালা উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ বিলাভেট রঙ্গমালা প্রকাশের কাজ চলছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ময়ুর সিংহাসন উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন। বাংলার পাঠশালা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস না কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ এবং আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার। তিনি ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের টিভি চ্যানেল। এবিপি আনন্দ কর্তৃক সাহিত্যে সেরা। - বাঙালি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ২০১৪ সালে। অতি সম্প্রতি তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।