"আরবী ক্বায়েদা-১ম ভাগ" বইয়ের ভূমিকাঃ দেরীতে হলেও ‘আরবী কায়েদা’ নতুন সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আলহামদুলিল্লাহ। আরবী পৃথিবীর সকল ভাষা গােষ্ঠীর মা। আরবী আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়ার ভাষা। আরবী জান্নাতের ভাষা, পবিত্র কুরআন ও হাদীছের ভাষা। আরবী আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর মাতৃভাষা। আরবী না জানলে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আরবী ভাষা শেখার আগে তার হরফ ও হরকত সমূহের উচ্চারণ ও ব্যবহারের কায়েদা বা পদ্ধতি সমূহ জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। নইলে ভুল উচ্চারণে ভুল অর্থ হয় এবং তাতে কঠিন গুনাহের আশংকা থাকে। সে কারণ ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ’ বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আশা করি বাজারে প্রচলিত কৃায়েদা সমূহের সাথে অত্র কায়েদার অনন্য বৈশিষ্ট্য সমূহ সুধী পাঠকবৃন্দ সহজেই বুঝতে পারবেন। নতুন সংস্করণে বইটি ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও এই সঙ্গে ‘তাজবীদ শিক্ষা’ নামে পৃথক আরেকটি বই প্রকাশিত হ’ল । অত্র বই সমূহে কোন ছবি ব্যবহার করা হয়নি। কেননা শিশু মনে কেবল আরবী বর্ণমালা রেখাপাত করুক, এটাই আমাদের কাম্য। অত্র আরবী কায়েদা’ ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বাের্ড’-এর অধীন মক্তব ও মাদরাসা সমূহের পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। নিরক্ষরতা দূরীকরণ প্রচেষ্টার সাথে সাথে আমরা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ আক্বীদা ও ইসলামী শিক্ষার আলাে ঘরে ঘরে পৌছে দিতে চাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।