بسم الله الرحمن الرحيم ছালাত শিক্ষার ক্ষেত্রে নির্ভরযােগতা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠা ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)-এর ৪র্থ সংস্করণ বের করতে পেরে আমরা সর্বান্তঃকরণে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ। কঠোর অধ্যবসায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মাননীয় লেখক পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলােকে যে সংস্কারধর্মী লেখনী সমূহ সমাজকে একের পর এক উপহার দিয়ে চলেছেন, অত্র ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) তারই একটি অংশ। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ/৭৮১-৮৫৫ খৃঃ) বলেন, যদি তুমি (বাগদাদের) একশত মসজিদেও ছালাত আদায় কর, তবুও তুমি কোন একটি মসজিদে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের ছালাত দেখতে পাবে না। অতএব তােমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তােমাদের নিজেদের ছালাত ও তােমাদের সাথীদের ছালাতের প্রতি দৃষ্টি দাও’(আবু ইয়া'লা, তাবাক্বাতুল হানাবিলাহ (বৈরূত: দারুল মা'রিফাহ, তাবি) ১/৩৫২)। এটি ছিল দূর অতীতের অবস্থা। এক্ষণে আমাদের এ ফিতার যুগে অবস্থার অবনতি কতদূর হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রধানতঃ অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা ও শৈথিল্যবাদিতার ফলেই এগুলি ঘটেছে। অথচ ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে এযাম থেকে অবিরত ধারায় একথা বর্ণিত হয়েছে যে, কোন বিষয়ে হাদীছ পেলে তারা বিনা শর্তে তার উপর আমল করতেন’ (অলিউল্লাহ দেহলভী, আল-ইনছাফ, বৈরূত: পূঃ ৭০)। এতদ্ব্যতীত ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ) সহ সকল মুজতাহিদ ইমাম বলেছেন যে, ছহীহ হাদীছই আমাদের মাযহাব’ (শা'রানী, কিতাবুল মীযান, দিল্লী: ১/৭৩)। উল্লেখ্য যে, শরী'আতের ব্যাখ্যা অবশ্যই হতে হবে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী, অন্যদের বুঝ অনুযায়ী নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে প্রথম প্রশ্ন করা হবে তার ছালাত সম্পর্কে। ছালাতের হিসাব সঠিক হলে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হলে অন্য সব আমল বরবাদ হবে (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮)। সেকারণ মাননীয় লেখক সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটির প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দিয়েছেন এবং চূড়ান্ত সাধনার মাধ্যমে মুহাদ্দেছীন ও সালাফে ছালেহীনের মাসলাক অনুসরণে ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে অত্র বইটি রচনা করেছেন। এ বইয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, বড় একটি বিষয়কে ছােট পরিসরে বিশুদ্ধ দলীল সহ পেশ করা। আল্লাহভীরু মুসলমানের জন্য এ বই পরকালীন মুক্তির পথে আলােকবর্তিকা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সঙ্গত কারণেই বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ম সংস্করণে ৮০ পৃঃ, ২য় সংস্করণে ১৪৪ পৃঃ, ৩য় সংস্করণে ২৪৮ পৃঃ এবং ৪র্থ সংস্করণে ৩০৪ পৃঃ হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ৪র্থ সংস্করণের হুবহু অনুবাদ হিসাবে ১ম ইংরেজী সংস্করণ একই সাথে প্রকাশিত হল। ফালিল্লা-হিল হামদ। বেপরিশেষে আমরা দারুল ইফতা ও গবেষণা বিভাগের সম্মানিত সদস্যগণকে এই বিশ্বজনীন গ্রন্থটি প্রকাশে আন্তরিক সহযােগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। সাথে সাথে এ মূল্যবান বইটি মাননীয় লেখকের ও তাঁর পিতামাতা ও পরিবারবর্গের এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ও সহযােগী সকলের পরকালীন মুক্তির অসীলা হৌক, এই দো‘আ করি -আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।