“পলাশি থেকে ধানমন্ডি" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ একটি মঞ্চ নাটক । প্রথম অভিনীত হয় ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। তারপর নিউইয়র্কে । মঞ্চ নাটকের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই এটিকে চলচ্চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে । এই নাটক মঞ্চায়নে ও চলচ্চিত্রে রূপায়নে আমাকে। অনেক বাধা বিঘ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে । বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী সরকারী রােষের ভয়ে এই নাটকে ও তার ছায়াছবিতে অভিনয়ে রাজি হন নি । তবু যারা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ । পলাশীর যুদ্ধ ও সিরাজউদ্দৌল্লাকে হত্যার ঘটনা নিয়ে নাটক লেখা হয়েছিল ঘটনার | পৌনে দু’শ বছর পর। আমি বঙ্গবন্ধু-হত্যা নিয়ে এই নাটক লিখেছি মাত্র ঊনত্রিশ বছর পর । এই কাহিনীর অধিকাংশ চরিত্র এখনাে বেঁচে আছেন, ফলে আমাকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে ঘটনাবিন্যাস। ঘটাতে হয়েছে। যতদূর সম্ভব আমি ঘটনার বাস্তব সত্যের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। এজন্যে নিজের সংগৃহীত তথ্য, নির্ভরযােগ্য সূত্রের তথ্য এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় যে রায় প্রকাশিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করেছি । ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনাে চরিত্রকে মসি মলিন করার চেষ্টা করিনি। সেদিক থেকে এটিকে একটি ডকুড্রামা বলা চলে।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।