"রিপ্রেজেন্টশনস্ অব দ্য ইন্টেলেকচুয়াল" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বুদ্ধিজীবীর জন্য এই পৃথিবী বড়ই বিপদসংকুল। অথচ এই পৃথিবীই তার কর্মক্ষেত্র। বহুধা বিভক্ত এই পৃথিবীতে অন্যান্য আরাে সব বিয়য়ের মতাে। বুদ্ধিজীবীর প্রত্যয়গত ধারণাটিও সমালােচিত। 'এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা ও তার বিপরীতে। দাড়িয়ে বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সুহৃদ হিসেবে এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ (১৯৩৫২০০৩) তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বাকল উন্মােচন করেছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভাষা সাহিত্যের একজন অধ্যাপক হিসেবে কিংব্য ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনতার একজন মুখপাত্র হিসেবে কিংবা একজন সুবক্তা হিসেবে সাঈদ সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে আলােচিত বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিত্ব। বুদ্ধিজীবী কে? তার উদ্দেশ্য, দায়িত্ব এবং তার ব্যাপ্তি ও আদলটি আসলে কেমন? রেইথ বক্তৃতার মঞ্চে দাড়িয়ে এড়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ ইতিহাস, সাহিত্য আর সভ্যতার পরম্পরার সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। লােভ, লালসা, স্তুতি আর প্রশংসার আধিপত্যবাদী সব আয়ােজনের বিপরীতে দাড়িয়ে একজন বুদ্ধিজীবী সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় সংগ্রামরত সাঈদের বুদ্ধিজীবী নির্বাসিত হয়। তার দেশ আছে, তবে বসবাসের জন্য সে অর্থে তার দেশ নাই ও তার সীমানা নাই। তবুও সে সনাতনী দেবতাদেরকে ব্যর্থ বলে। মনােজ্ঞ বাগ্মীতা আর অসাধারণ ( লেখনীতে সাঈদের এই আলােচনা। রিপ্রেজেন্টেশনস অব দ্য ইন্টেলেকচুয়াল” আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জিজ্ঞাসায় নতুন মাত্র করে।
এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদের জন্ম ১৯৩৫ সালে, ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে এক এপিসকোপ্যালিয়ান খ্রিস্টান পরিবারে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর উদ্বাস্তুর নিয়তি মেনে কিশাের বয়সে পরিবারের সাথে মিশরে পাড়ি জমান। কিছুকাল কায়রাের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখানে মাউন্ট হারমান স্কুল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পাঠ শেষে ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগদান করেন। ওখানেই আজীবন ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্য পড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইংল্যান্ডের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন। ফিলিস্তিনী মুক্তি আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সাঈদ। ১৯৭৭ সালে প্রবাসী ফিলিস্তিন পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে ইসরাইল-ফিলিস্তিন চুক্তিসংক্রান্ত মতবিরােধে পদত্যাগ করেন তিনি। এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের পিতা সাঈদ প্রায় এক যুগ ধরে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান মানুষটি।