ভূমিকা এটি একটি সামাজিক উপন্যাস। লেখকের গল্প বলার ভঙ্গিটি এমনই যে কাহিনির সাধারণ ঘটনাগুলোও অসাধারণ হয়ে পাঠকের কাছে ধরা দেয়। এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো ,যেমন-এমরান, সালমা ও সাহানা ,তাদের সহজ সরল জীবনে ঘটে যাওয়া অসাধারণ ঘটনাগুলো নিয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটির কাঠামো। এখানে উপন্যাসের সামান্য অংশ তুলে দিচ্ছি: সাহানা, সরকারি কর্মকর্তার একমাত্র মেয়ে। বাপের দুলালী, মায়েরৈ মানস কন্যা এই সাহানা্ অষ্টাদশী এই অপরূপ সুন্দরী মেয়েটি জোঁকের মতই লেগে আছে এমরানের পেছনে। কিন্তু এমরান মেয়েটিকে ভালবাসতে পারেনি, আবার দূরেও ঠেলতে পারেনি। এমনই এক শক্ত অথচ অদৃশ্য মায়া-শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে ওর জীবনের সঙ্গে যা থেকে শত চেষ্টা করেও মুক্তি পায়নি এমরান। কিন্তু ভালোবাসাবাসি শাহানাকে এখানে আশা করেনি সে। কাজেই ওর সামনে যাওয়াটাও এখন ঠিক হবে না। তাই অনেকটা না দেখার ভান করেই চাইছিল এখান থেকে বেরিয়ে যেতে। সামনে গুলিস্তান আর নাজের সন্ধিস্থল। দ্রুত গতিতে সেদিকে হাঁটতে লাগল এমরান। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পা্রল না। মাত্র কয়েক পা -আবার কানে এল সেই মায়াবী ডাক। এবার অতি কাছে-প্রায় কানের গোড়ায়-‘এমরান ভাই’ শুনুন,। আর যায় কোথায়! ডাক শুনেই এবার থমকে দাঁড়াল এমরান। দেখেল,ওর পেছনে প্রায় ঘাড়ের উপর গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাহানা...ঘটনার বর্ণনায় ও ভাষার প্রাঞ্জলতায় বইটি পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখে। ‘তোমাকেই ভালোবাসি’ ।
১৯৫৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বকুলতলা গ্রামে লেখক গাজী মােঃ আবু সাঈদের জন্ম। পিতা আক্ৰম আলী গাজী এবং মাতা আমেনা খাতুন-উভয়েই ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। ছাত্র হিসেবে তিনি বেশ মেধাবী ছিলেন এবং তখন থেকেই লেখালেখির শুরু। জীবনের প্রথম অধ্যায়টা কাটে গ্রামে। নিজের গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় কর্ম-জীবন। ১৯৮১ সালে শহুরে কন্যা এফ.এস. রওনক জাহানকে বিয়ে করার পর কর্ম-জীবন পাল্টে যায় তার। চাকরি নেন ঢাকায় নামকরা একটি দেশীয় শিল্পগােষ্ঠীতে। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়! তারপরও সেই অসাধ্য সাধন করে গেছেন তিনি। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘কিছু কবিতা কিছু গান। লেখাগুলাে স্কুল-জীবনের রচনা হলেও পাঠকমহলে বেশ সমাদৃত হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে বাংলার কিংবদন্তি গােয়েন্দা লেখক স্বনামধন্য কাজী আনােয়ার হােসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রজাপতি প্রকাশন থেকে বের হয় লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘বকুলতলার ইতিকথা'। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠ করে কাজীদা যে মন্তব্য করেছিলেন, তার প্রথম লাইনটা ছিল‘চমৎকারভাবে গল্প এগিয়ে নিয়েছেন লেখক।