ফ্ল্যাপে লিখা কথা এদেশের কিশোর বয়সীদের উদ্দেশ্যে লেখা সর্বপ্রথম যে রবীন্দ্রজীবনী পাঠক সমাজে বিপুল সাড়া তুলে তার লেখক ছিলেন হায়াৎ মামুদ। তখন পাকিস্তানি আমল। এমন এক দু:সময় সেদিন এসেছিল যখন কবিগুরোকে অঘোষিতভাবে প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁর কোনো বই কলকাতা থেকে আমদানি করা যেত না, ঢাকার কোনো প্রকাশকও তাঁর রচনা মুদ্রণের সাহস পেতেন না। তেমন অবস্থায় চট্রগ্রাম থেকে অতুলনীয় নয়নভুলানো রূপে শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীর প্রচ্ছদ নিয়ে বের হয় ‘রবীন্দ্রনাথ :কিশোর জীবনী’ । সব বয়সেরই পাঠক মহাসমাদরে সে-বই লুফে নেন। এখনও সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন যে ,বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে কোনোখানে এর সমতুল্য কিশোরপাঠ্য রবীন্দ্র জীবনী অন্তত তখন পর্যন্ত আর বেরোয় নি। এখনও বেরিয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতি পৃথিবীর বৃকে যতদিন টিকে থাকবে ততদিন এই মহাপুরুষও জীবিত থাকবেন। শুধু বাঙালিরই নয়, বিশ্বের যাবতীয় ভাষার বরেণ্য সাহিত্যস্র্রষ্টাদের মধ্যে তাঁর নিশ্চিত আসন অমলিন নির্ধারিত থাকবে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের ত্রাতা ও প্রতিপালক। পৃথিবীর কোনোখানে একটি বাঙালিও যতদিন বেঁচে থাকবে, এ-কথা সে কখনও ভুলবে না। কারণ ,রবীন্দ্রনাথই যে তার পরিচয় -শেক্সপীয়রর যেমন ইংরেজদের ,পুশকিন যেমন রুশীদের ,গ্যোয়টে যেমন জর্মনদের ,থের্বান্তেস যেমন হিস্পানিদের , বাঙালির ঠিক তেমনি রয়েছেন একজন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া নামে আখ্যাত এক গ্রামে, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে । ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস । স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্ৰায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্ৰগতি প্ৰকাশনে, মস্কোয়-সুদূর ও স্বপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নে বসে । দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার-প্ৰথমে কলেজে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে । বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যে । দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে । সমালোচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ষাটেরও বেশি।