ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বাংল কবিতায় মহাদেব সাহার বিরামহীন বিচরণ। ‘এই গৃহ একটি সন্ন্যাস’ থেকৈ ‘মাটির মলাট’- মাঝে আরো একষট্টিটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ। গদ্য ও অন্যান্য কাব্য-সংকলন মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।
আপাদমস্তক কবি তিনি। দুদীর্ঘ শীলন ও সাধনায় আধুনিক বাংলা কাব্যসাম্রাজ্যে তিনি একটি নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন- বহুপ্রজ কবি হিসেবে নয়, কবিতার আত্মা ও আঙ্গকের যৌগরসায়নে বহুমাত্রিক কবিকৃতির ধারায় কবিতাবিমুখ পাঠককে তিনি প্রায় একক কৃতিত্বে ফিরিয়ে এনেছেন কবিতায়। পাশ্চাত্যের বহু মতবাদের দাসত্বে ও বিমূর্ততার ভেল্কিবাজিতে একদা কবিতা হয়ে উঠেছিল দুর্বোধ্য সিসা-কাঠিন্যের আকর। মহাদেবের নিরন্তর কাব্য-সংগ্রামে কবি ও কবিতাকে পিঠ দেখানো পাঠক পুনর্বার মনস্ক হয়েছেন কবিতায়। কী তাঁর কবিতার জাদু? কী তাঁর বৈশিষ্ট্য এবং স্বাতন্ত্র্য? সুদীর্ঘ কাব্য পথ পরিক্রমায় কবি মহাদেব সাহার আসন-অবস্থান কি কোথাও আছে? তাই অন্বেষণ ও অনুসন্ধান করেছেন মানবদ্র্ধন পাল তাঁর কবির আঙুলে কত জাদু গ্রন্থে।
এ-বই প্রথাবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো গবেষণাগ্রন্থ নয়, একেবারেই স্বতন্ত্র এই রচনা। একজন মন্ময় পাঠক হিসেবে লেখক মহাদেব সাহার কাব্য-মৌচাকের মধুভরা প্রকোষ্ঠগুলো দেখতে চেয়েছেন, দেখাতে চেয়েছেন এবং এই দেখার ম্যদ দিয়ে আবিষ্কার করেছেন নতুন দিকদিগন্ত। সত্তর দশক থেকে কবিতার সন্ধানী ও বিমুগ্ধ পাঠক মানবর্দ্ধন পাল যেদিন জেনেছেন কবির এই পংক্তি : ‘কিন্তু হায়, আমার ব্লাডগ্রুপের সাথে/কারো রক্ত মেলে না কখনো’- সেদিন থেকেই মহাদেব সাহার কাব্যস্বাতন্ত্র্য অনুধাবনের এষণা তাঁর- সেও প্রায় চল্লিশ বছর। শুধুই আবেগঋদ্ধ কবির শব্দবন্ধে নয়; কবিতার প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এ বই বলা যায় ‘পদ্যপ্রবন্ধ’- কিন্তু তথ্য অন্বেষণে, উদ্ধারে এবং উল্লেখে গ্রন্থকার সম্পূর্ণ নিরাপস।